
নিউজ ডেস্ক : নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণার পর পুলিশের উচ্চপদে ফের বড় রদবদল এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার ৭৬ জন ওএসডি কর্মকর্তাকে নতুনভাবে বাহিনীর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে তাদের সংযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তা এতদিন ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) অবস্থায় ছিলেন। ৭৬ কর্মকর্তাকে নতুন করে সংযুক্তির ঘটনায় বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা চলছে। কারণ, ওএসডি থাকা কর্মকর্তাদের কার্যত কোনো কাজ থাকে না। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, যেই কর্মকর্তারা চাকরিতে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছেন, তাদের কেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা পুলিশের ইউনিটগুলোতে সংযুক্ত করতে হলো?
রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওএসডি এসব কর্মকর্তারা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। এই সুযোগে তাদের অনেকেই বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে প্রায়ই বৈঠকে মিলিত হতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এসব কর্মকর্তা। তাদের একটি অংশ ওই সব বৈঠকে বর্তমান সরকারবিরোধী নানা বিষয়ে আলাপ–আলোচনা করতেন বলে খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া তারা আগের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নথিও পাচার করে থাকতে পারেন, এমন আলোচনাও ছিল।
সূত্রটি আরও বলছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৭৬ কর্মকর্তাকে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে বিভিন্ন রেঞ্জ ও জেলা পুলিশ কার্যালয়সহ বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়, যাতে তারা একসঙ্গে ঢাকায় অবস্থান করে কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে না পারেন। এ জন্য বিভিন্ন এলাকায় তাদের সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে যেসব কর্মকর্তাকে নতুন করে বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এখনো পলাতক। পলাতক কর্মকর্তাদেরও বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, এখন পর্যন্ত পলাতক কর্মকর্তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা জননিরাপত্তা বিভাগকে দেয়নি পুলিশ। এ কারণে পলাতক কিছু কর্মকর্তার নাম ৭৬ জনের তালিকায় থাকতে পারে।
তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে ভিন্ন কথা। সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, পলাতক পুলিশ সদস্যদের তালিকা তারা জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠিয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ জুলাই ৪৩ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয়।
নতুনভাবে ৭৬ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন রেঞ্জ কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ ডিআইজি, ৪৬ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার থেকে সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ১২ জন ও সাত পুলিশ সুপার রয়েছেন।
ডিআইজিরা হলেন– শাহ্ মিজান শাফিউর রহমান ও নুরুল ইসলামকে রংপুর রেঞ্জে; মিরাজ উদ্দিন আহমেদ, মনিরুজ্জামান, ইলিয়াস শরীফকে সিলেট রেঞ্জে; জাকির হোসেন খান, মোহাম্মদ শাহ আবিদ হোসেন, জিহাদুল কবিরকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে; মাহবুবুর রহমানকে খুলনা রেঞ্জে; মঈনুল হক ও মোস্তাক আহমেদ খানকে সারদায় বদলি করা হয়েছে।
সংযুক্ত সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজিরা হলেন— রিফাত রহমান শামীম, মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, মোহাম্মদ মাইনুল হাসান, আলী আশরাফ ভুঞা, নাবিল কামাল শৈবাল, জয়নুল আবেদীন, মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন, মোহাম্মদ এহসান শাহ, মোহাম্মদ সালাম কবির, আজবাহার আলী শেখ, সোহেল রেজা ও কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান।
পুলিশ সুপাররা হলেন— আব্দুল মোমেন, কাজী আশরাফুল আজীম, এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, মোহাম্মদ উল্ল্যা, এস এম শফিউল্লাহ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান ও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক।
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে দমনপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আত্মগোপনে চলে যান। ওএসডি করে অনেক কর্মকর্তাকে বসিয়ে রাখা হয়। তাদেরই একাংশকে এখন আবার দায়িত্বে ফেরানো হয়েছে।
মন্তব্য (০)