কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ পরিবেশ রক্ষার্থে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্তর্বতী সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এই প্রথম কলাপাতায় লবণ বিক্রি করে নজর কেড়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়ী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শমসের আলী। তার এমন অভিনব উদ্যোগের প্রশংসা করছেন স্থানীরা।
পরিবেশ রক্ষার্থে ক্ষতিকারক পলিথিন ব্যবহারে নিষিদ্ধের ঘোষণা করাছেন। সরকার নিষিদ্ধ করার পরেও প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের প্রতিটি হাট-বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা অবাধে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করেই যাচ্ছে। তবে এখানেই ব্যতিক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শসসের আলী। তিনি গত এক থেকে দেড় সপ্তাহ ধরে এই প্রথম খড়িবাড়ি বাজারে কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো ১ কেজির লবণের প্যাকেট তৈরি করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। শমসের আলী ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের নাগদাহ এলাকার বাসিন্দা।
খরিবাড়ী বাজার গিয়ে দেখা গেছে, কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো এক কেজি লবণের প্যাকেট তৈরি করে দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। অনেকেই তার এই কলাপাতা মোড়ানো লবণের প্যাকেট ও দোকানের ছবি সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যম পোস্ট করেছেন। খরিবাড়ী বাজার টানা ১৫ বছর খোলা মার্কেটে লবণ বিক্রি করা সমসের আলী জানান, আমি পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদে দেখে জানতে পারি পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে দেন সরকার। আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নিজে উদ্যোগে কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো এক কেজি লবণের প্যাকেট করে বিক্রি করতে শুরু করি।
কলা পাতায় লবণের প্যাটেক করায় বিক্রি কমছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিক্রি কমেনি। তবে আমার এমন উদ্যোগ দেখে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। আসলেই পলিথিন খুবই ক্ষতিকর পণ্য। তারপরও এখনো অনেকেই ব্যবহার করছেন। কর্তৃপক্ষ তৎপর হলে পলিথিন ব্যবহার কমে যাবে বলে জানান তিনি। খরিবাড়ী বাজারে ক্রেতা নাজমুল হুদা ও কার্তিক চন্দ্র রায় জানান, আসলেই কলার পাতায় মোড়ানো লবণের প্যাকেট গুলো অনেক পর দেখে ভালো লাগলো। এমন ভাবে মোড়ানো হয়েছে ব্যাগে রাখলেও পড়বে না।
খরিবাড়ী এলাকার সাবেক অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম জানান, লবণ বিক্রেতা শমসের আলভ খরিবাড়ী বাজারে পলিথিনের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে পণ্য বিক্রির উদাহরণ হিসেবে কলার পাতায় লবণের প্যাকেট করে বিক্রি করছেন। তার অসাধারণ পদ্ধতি দেখে আরও একজন লবণ ব্যবসায়ী কলার পাতায় লবণ বিক্রি করছেন। এই পদ্ধতিতে ধরে রাখতে সবাই মিলে এগিয়ে আসলে ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার কমে যাবে। তিনি আরও জানান, কলার পাতা সহজলভ্য, প্রাকৃতিকভাবে এটি পচনশীল এবং পরিবেশবান্ধব, যা পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও সাহিত্যিক আব্দুল হানিফ সরকার জানান, সামাজিক যোগাযোগে ফেসবুকে কলাপাতা মোড়ানো লবণের প্যাকেটসহ লবণ ব্যবসায়ীকে অত্যন্ত ভালো লেগেছে। এই অসাধারণ দৃশ্যটি আজ ৪০ থেকে ৪৫ বছরে সব ব্যবসায়ী ক্রেতা বিক্রেতারা ব্যবহার করতেন। এরপর আস্তে আস্তে সেটি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। আজ হঠাৎ কলাপাতা মোড়ানো লবণের প্যাটেক দেখে অত্যন্ত ভালো লেগেছে। এটি সত্যি পরিবেশ বান্ধব। আসলে আমরা এতদিন জেনেশুনে পলিথিনের ব্যবহার করেছি। বর্তমান সরকার যেহেতু পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। আমাদের সবাইকে পরিবেশ-বান্ধব কলা গাছের পাতার পাশাপাশি শট্টির পাতা এবং পাটজাত পণ্যের ব্যবহার করা উচিত বলে জানান তিনি।
মন্তব্য (০)