পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ হিমালয়ের কন্যা খ্যাত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে আকাশচুম্বী অপরূপ সৌন্দর্যের কাঞ্চনজঙ্ঘা। এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ইতিমধ্যে দূর দুরান্ত থেকে নানা বয়সী নারী পুরুষ পর্যটকদের ভিড় দেখতে পাওয়া যায়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে অনেকের ভাগ্যে দেখা মিলে অপরূপ সৌন্দর্যের মায়াবী কাঞ্চনজঙ্ঘা। আবার অনেকে দেখতে না পেয়ে সমতলের চা বাগান, ডাকবাংলো, মহানন্দা নদী, জিরো পয়েন্ট, আনন্দধারা, ভারত সীমান্ত এসব দেখে মুগ্ধ হচ্ছে অনেকে।
তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকের সমাগম ঘটেছে প্রতিনিয়ত। ভোরের চায়ে চুমুক দিতে দিতে
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা মিললে এক মায়াময় আনন্দ দেখা যায় পর্যটকদের মাঝে এবং সীমাহীন সুখানুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে আগতদের মাঝে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে নীলাকাশে এমনই রূপের সৌন্দর্য ছড়িয়ে উদয় হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
পর্যটকরা এ অঞ্চলের পর্যটন স্পট ডাকবাংলোর পিকনিক কর্নার ও মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখছেন রূপশ্বৈর্য পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা। দেখার পাশাপাশি ছবি তুলছেন এবং ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরৎ, হেমন্ত আর শীতকালেই দেখা মেলে স্বেতশুভ্র এই কাঞ্চনজঙ্ঘা।ভোরের আলো মেখে জাগতে শুরু করে সে। তারপর ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাতে থাকে। মাঝেমাঝে ভোরবেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায় তাকে। জেগে ওঠার সাথে সাথে নানা রঙের খেলা শুরু হয়। ভোরের সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়লে কাঞ্চনজঙ্ঘা হয়ে ওঠে লাল টকটকে। দিন পেরুনোর সাথে রং বদলাতে থাকে তার।কখনো কমলা, তার পর হলুদ, সাদা ইত্যাদি।
অপরূপ।কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালায় ২য় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা প্রায় ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট বা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। নদীগুলি বাংলাদেশেও প্রবাহিত হয়। এখান থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব কাছে থাকায় খুব কাছ থেকে দেখা মেলে অপরূপ সৌন্দর্যের মায়াবী কাঞ্চনজঙ্ঘা। প্রতিবছর অক্টোবরের ২য় সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। ছবির মতো ভেসে উঠা শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য ছাড়াও দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল।
ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে ঘুরতে আসা ঢাকা থেকে শরিফুল ইসলামসহ তার সাথে থাকা সহপাঠীরা জানায়, কয়েকদিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছিল না দেখছিলাম অনলাইনের মাধ্যমে। আজকে আমরা একটু দেখতে পেয়েছি, এটাই আমাদের কাছে অনেক আনন্দের। খুব ভালো লাগলো এই এলাকায় এসে। ভালোলাগার অনুভূতিটাই অন্যরকম।
রাজশাহী থেকে পরিবার নিয়ে আসা নাসিম উদ্দীন জানান, পুরোপুরি দেখতে পায়নি, তারপরেও আনন্দিত হয়েছি। এই এলাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা বাদে অনেক কিছু দেখার আছে। কয়েকদিন ধরেই ফেসবুকে চোখ রাখছিলাম ও খোঁজ খবর রাখছিলাম দেখা যায় কিনা। আজ সকালে এসেই দেখতে পেয়ে ভাগ্য প্রসন্ন হলো।
এদিকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্ঘ ও পর্যটন ঘিরে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, শিক্ষাবিভাগ, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, পুলিশ কর্তৃপক্ষের ডাকবাংলো, জনস্বাস্থ্য বিভাগের রেস্ট হাউস, বনবিভাগের রেস্ট হাউসসহ সরকারি সকল ডাকবাংলোতে এসব পর্যটকরাত্রী যাপন করছেন।
অপরদিকে বেসরকারি ভাবেও গড়ে উঠেছে স্বপ্ন গেস্টহাউস, কাজী ব্রাদার্স আবাসিক, দোয়েল হোটেল, মহানন্দা কটেজ, সীমান্তের পাড়, কাঠের বাড়ি, ধানসিড়ি, ফরমান হোটেল, স্কয়ার আবাসিক হোটেল, কাঞ্চনজঙ্ঘা আবাসিক। গড়ে উঠেছে কমিউনিটি ট্যুরিজম। এর ফলে অনেকে বাড়িতেও রাখছেন পর্যটক। কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নাট্যদল ভূমিজ প্রতি বছর আয়োজন করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা পালাটিয়া উৎসব। ট্যুরিস্ট পুলিশ এর অফিসার ইনচার্জ জানান, পর্যটকদের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছি। আমরা আমাদের কন্টাক্ট নম্বর গুলো বিভিন্ন জায়গায় বিল বোর্ডের মাধ্যমে প্রদর্শন করেছি। জরুরি ফোন আসলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, পর্যটকেরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারে সে জন্য সকল ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য (০)