রংপুর ব্যুরোঃ যথাযোগ্য মর্যাদা, গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রংপুরে উদযাপিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস।১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার স্মরণে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
দিবসের শুরুতে প্রথম প্রহরে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানান।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই জেলা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের ঢল।পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথী,শিক্ষকসহ নানান শ্রেণীর মানুষ রংপুর স্টেডিয়ামে।রংপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এর মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও আলোচনা সভা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীনতা আমাদের অহংকার। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।”
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ইতিহাস বিকৃতি রোধ করে সত্য ও সঠিক তথ্য জানাতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শেই একটি শক্তিশালী, মানবিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। একই সঙ্গে সামনে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়-সে লক্ষ্যে প্রশাসন আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সকলের সহযোগিতায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদা, দেশপ্রেম ও ঐক্যের শিক্ষা দেয়। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
এরপর রংপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় দিবসের অন্যতম আকর্ষণ-বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজে অংশ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরাও কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন।
শৃঙ্খলাবদ্ধ কুচকাওয়াজ ও প্রদর্শনীতে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে দেশপ্রেমের আবহ সৃষ্টি হয়। কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা অংশগ্রহণকারী দলগুলোর শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও প্রস্তুতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠান জুড়ে বিজয়ের গান, দেশাত্মবোধক স্লোগান ও জাতীয় পতাকার রঙে মুখর হয়ে ওঠে রংপুর স্টেডিয়াম। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে বিজয় দিবসের উৎসবমুখর পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে রংপুরবাসী নতুন করে শপথ নেয়-মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার।
মন্তব্য (০)