বগুড়া প্রতিনিধি : বছরের পর বছর থানা চত্বর, পুলিশ লাইন্স কিংবা বিভিন্ন দপ্তরের মালখানায় পড়ে থাকা জব্দ যানবাহনের সারি যেনো লম্বা হচ্ছে প্রতিদিনই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রোদ-বৃষ্টি আর অবহেলায় চোখের সামনে ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। ধুলোবালি আর মরিচায় ঢাকা পরে যানবাহনগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা হারালেও নেয়া হচ্ছেনা কোন সরকারি উদ্যোগ।
বগুড়াসহ দেশের অধিকাংশ থানা এবং পুলিশ লাইন্সে প্রবেশ করলেই চোখে পরে বিভিন্ন মামলায় জব্দকৃত যানবাহনের স্তুপ। প্রথম দেখাতে যে কারোরই মনে হতে পারে এ যেনো এক পরিত্যক্ত যানবাহনের কবরস্থান! মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান কিংবা অটোরিকশা কি নেই এই তালিকায়।
জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, বগুড়ায় বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে জব্দ অবস্থায় আছে ৯টি মাইক্রোবাস, ৪৯টি প্রাইভেটকার, ৫৮টি ট্রাক ও পিকআপভ্যান, ১৯টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ৪১৫টি মোটরসাইকেল, ২৮টি ইজিবাইক, ৫টি ভ্যান ও ৪টি সাইকেল। এছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মামলাতেও জব্দ রয়েছে আরো ২৪৬টি বিভিন্ন রকমের যানবাহন। অনুসন্ধান বলছে, এফিডেফিটমূলে শুধু কাগজ পারাপারের হাত বদলের খেলায় আইনগত প্রক্রিয়ায় জব্দকৃত যানবাহনগুলোর অধিকাংশরই প্রকৃত মালিকানা যাচাই কোনদিনই সম্ভব হবেনা।
এমন পরিস্থিতিতে নিষ্পত্তিযোগ্য মামলায় জব্দকৃত যানবাহনগুলো প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজীকরণ অথবা অকেজো অবস্থায় ফেলে না রেখে তা পুনর্ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
থানাগুলোতে সেবাগ্রহীতাদের জায়গা দেয়ায় যখন কষ্টসাধ্য তখন এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মাদ রায়হান জানালেন জব্দকৃত যানবাহন নিয়ে সৃষ্ট তাদের বিড়ম্বনার কথা। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, প্রকৃত মালিকানা জটিলতা আর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে অবকাঠামোগত ব্যবস্থা না থাকাতেই এই সমস্যা বাড়ছে। তারা চাইলেই ইচ্ছাস্বাধীন এই যানবাহনগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
অন্যদিকে যানবাহনের বৈধ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে গত এপ্রিলে স্ব উদ্যোগে অধিদপ্তর বরাবর পত্র প্রেরণ করেছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তৎকালীন রাজশাহী এবং বর্তমান বগুড়ার উপ-পরিচালক জিললুর রহমান। তিনি বলেন, নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে কোটি টাকার এই সরকারি সম্পদগুলো পুনর্ব্যবহার কিংবা কাজে লাগানো সম্ভব। যেখানে সরকারের অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের যানবাহন সংকট রয়েছে সেখানে চোখের সামনে কোটি কোটি টাকা মূল্যের যানবাহন নষ্ট হয়ে যাওয়াটা সত্যিই কষ্টদায়ক।
বাস্তবতা হলো আলামত হিসেবে জব্দ থাকা এই যানবাহনগুলো রাখার মত যে অবকাঠামো প্রয়োজন তা আমাদের নেই। আবার মাদক মামলায় যে মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি জব্দ করা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর সঠিক মালিক কে কখনোই পাওয়া যায় না। আর এসব কাজে যে যানবাহন গুলো ব্যবহৃত হয় তার অধিকাংশই থাকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন। এমন পরিস্থিতিতে যেসব যানবাহনের মালিকানা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের সাথে সমন্বয় করে আলাদা একটি দপ্তর গঠনের মাধ্যমে যানবাহনগুলোকে সচল রাখতে সরকারি কিংবা বেসরকারি সেবামূলক খাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সমস্যা যখন দিনকে দিন জটিল হচ্ছে সমাধান কি হতে পারে জানতে চাইলে জেলা জজ ও দায়রা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. আব্দুল বাসেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে এই পরিস্থিতি উত্তরণে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, আদালত চত্বরে আধুনিক একটি মালখানা থাকার কথা থাকলেও তা এখনো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। মামলায় জব্দকৃত আলামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই সেগুলো রক্ষার জন্যও সঠিক ব্যবস্থা নেয়া সরকার এর দায়িত্ব। এজন্যে আলামত রক্ষায় আধুনিক মালখানা নির্মাণের পাশাপাশি জব্দকৃত যানবাহন রাখার জন্য বিশেষ শেড নির্মাণের লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে গত ৫ আগস্ট বগুড়া সদর থানায় আগুনে বিভিন্ন মামলায় জব্দ থাকা ৫৬টি যানবাহন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সরকারি সম্পদ রক্ষায় পুনর্ব্যবহারের নীতিমালা এবং কার্যকর তদারকির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে নেয়া হোক যুগোপযোগী পদক্ষেপ এমনই প্রত্যাশা সকলের।
মন্তব্য (০)