নিউজ ডেস্কঃ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা হবে কাল। জুলাই–আগস্টের দমন-পীড়নে প্রাণ হারানো মানুষের স্বজন, আহত আর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সাধারণ মানুষ- সবার দৃষ্টি এখন এই রায়ের দিকেই। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত, সাক্ষ্যগ্রহণ আর আইনি লড়াই শেষে এখন অপেক্ষা শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের।
জাতিসংঘের হিসেবে জুলাই অভ্যুত্থানের দমন পীড়নে প্রাণ গেছে অন্তত ১৪শ নিরীহ মানুষের। ঘাতকের বিচারের অপেক্ষায় দীর্ঘ এক বছরের বেশী সময় অপেক্ষার পর রায় পেতে চলেছে শহীদ পরিবার, আহত এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া এদেশের আপামর জনগণ।
কাগজে-কলমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয় গেল বছরের অক্টোবরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হবার পর। এরপর অন্তত ৬ মাস সময় নিয়েছে তদন্ত সংস্থা, কী ঘটেছে তার একটা প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে। এই আদালতে জুলাই আগস্ট হত্যাযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক চার্জ উপস্থাপন হয় চলতি বছরের জুনে। এবং চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয় জুলাই-য়ে। সে সময়ই এই গণহত্যা মামলার আসামী সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হন, আদালতের ভাষায় "অ্যাপ্রুভার"।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী তামিম বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে আহত এবং নিহতদের শরীর থেকে প্রাপ্ত বুলেট, পিলেট এবং তাদের চিকিৎসা ও মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করে ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছি। শুধু তাই নয়, জুলাইয়ে যে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিলো সেই হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউল ও আমরা জমা দিয়েছি।’
মোটা দাগে এই মামলার ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, প্রমাণ উপাত্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম ৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ করতে লড়েছে। এর শুরুতেই আছে ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা ও নাতিপুতি সম্বোধনের বিষয়টি। প্রসিকিউশন পক্ষ এই বক্তব্যকে গণহত্যার উস্কানি হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ১৭ নভেম্বর
গণহত্যার নির্দেশ, পরিকল্পনা, সংগঠিত করার অভিযোগ হিসেবে আরও এসেছে রংপুরে আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড, চানখারপুলে ৫ আগস্ট ৬ জনকে হত্যা, আশুলিয়ায় গুলি করে লাশ পুড়িয়ে দেবার ঘটনা এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি এবং ছাত্র-জনতার ওপর মারণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা।
প্রসিকিউশন মনে করছেন, তারা অকাট্যভাবে পতিত স্বৈরাচারসহ অন্যান্য আসামীদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছেন।
প্রসিকিউটর গাজী তামিম বলেন, ‘এটা এমন একটা অপরাধ, এটা হলো ক্রাইম অব দ্যা ক্রাইম। যেখানে মাতৃর ২০ দিনে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২৫ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে আহত করা হয়েছে। তাদের অঙ্গহানি হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, চোখ নষ্ট হয়েছে তার শাস্তি যদি মৃত্যুদণ্ড না হয় তাহলে ভিকটিমরা ন্যায়বিচার পাবে না।’
প্রশ্ন হলো, যেখানে মামলার ৩ আসামীর মধ্যে ২ জনই পলাতক তখন এই বিচারের ভবিষ্যৎ কী?
গাজী তামিম বলেন, ‘এটা রাষ্ট্রের কূটনৈতিক দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ব হলো আইনের মধ্যে থেকে বিচার সম্পন্ন করা। আমরা তা সম্পন্ন করেছি। শাস্তি প্রয়োগ করা নিয়ে এ আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে সরকার শাস্তি এক্সিকিউট করবে। সরকার কিভাবে করবে তা সরকারের ওপর।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম দাবি করছেন, এই বিচার এতটা স্বচ্ছ হয়েছে যে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এটি প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। আদালত এজলাস থেকে বিচারকাজ সরাসরি দেখানোসহ অনেক ব্যতিক্রম ব্যাপার দেখা গেছে জুলাই আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায়। কিন্তু প্রতিবেশি ভারত যেভাবে, অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা হলে, কী প্রতিক্রিয়া আসবে, এবং সরকার সেটিকে কীভাবে সামাল দেবে, সেদিকেও নজর রাখছেন অনেকে।
মন্তব্য (০)