
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকার কোনো বিলাসবহুল বলরুম নয়, বরং গাছপালায় ঘেরা ছায়াতল বাংলাদেশের ক্যাম্পাস। হাসিখুশি বঞ্চিত শিশুদের মুখে আনন্দের ঝিলিক। সেই উচ্ছ্বাসের মাঝে পরানো হলো নতুন মুকুট—মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২৫। মুকুট পেলেন সুমাইয়া হারুন, যাঁর চোখে ‘রাণী’ মানে সৌন্দর্যের নয়, দায়িত্বের প্রতীক।
রোববার (১২ অক্টোবর) শ্যামলীতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রশিক্ষণের স্কুল ছায়াতল বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে শিশুদের নিয়েমুকুট পরিয়ে দেন মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম। অনুষ্ঠানটি ছিল মিস বাংলাদেশ ইমপ্যাক্ট ফোরাম ২০২৫-এর অংশ, যেখানে আলোচনার বিষয় রূপ নয়, মানবতা, নেতৃত্ব ও টেকসই উন্নয়ন।
২৪ বছর বয়সী সুমাইয়া হারুন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় মডেল ও এসডিজি উদ্যোক্তা। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতক শেষ করে বর্তমানে কানাডিয়ান ওভারসিজ বিজনেস ইন কর্পোরেটেডে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত। তাঁর লক্ষ্য—প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে একটি বৈশ্বিক ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, যা দেশের অর্থনৈতিক কূটনীতিকে আরও এগিয়ে নেবে।
মুকুট পাওয়ার পর সুমাইয়া বললেন,“একজন সত্যিকারের রাণী সৌন্দর্যের জন্য নয়, দায়িত্বের জন্য মুকুট পরেন। আমি এমন এক রাণী হতে চাই, যিনি শুনবেন, শিখবেন এবং সৌজন্য দিয়ে নেতৃত্ব দেবেন। মিস আর্থ কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়—এটি একটি আন্দোলন।”
২০২৫ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধন করা মিস বাংলাদেশ ইমপ্যাক্ট ফোরাম এশিয়ার প্রথম জলবায়ু ও এসডিজি-ভিত্তিক নারী নেতৃত্ব ও কূটনীতি প্ল্যাটফর্ম। এর লক্ষ্য সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাকে বিনোদনের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমাজ পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা।
চেয়ারম্যান মেঘনা আলম বলেন, “নারী শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নন, তিনি পরিবর্তনের প্রতীক। শিশুরা যখন আমার জন্মমাস উদযাপন করতে চেয়েছিল, আমি চেয়েছিলাম তাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে এমন কিছু করে যা বাস্তব পরিবর্তন আনে। তাই এই মুকুট উৎসব বঞ্চিত শিশুদের মাঝেই করেছি।”
আয়োজনটি আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের পরদিন অনুষ্ঠিত হয়। মূল থিম ছিল—‘প্রকৃতি, শিশু ও ভালোবাসা’। দিনভর ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মাসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক গল্পপাঠ এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। ফোরাম কাজ করছে জাতিসংঘ ঘোষিত তিনটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের ওপর—লিঙ্গ সমতা (SDG 5), জলবায়ু ব্যবস্থা (SDG 13) এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব (SDG 17)।
২০২৪ সালে ফাউন্ডেশন ১০ জন নারীকে আন্তর্জাতিক গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশে। ফেরদৌসি তানভীর ইচ্ছা ফিলিপাইনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কাঁচের চুড়ি পরে আন্তর্জাতিক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। জেসরিন হোসেন তমা ভারতের মিস গ্ল্যাম ইউনিভার্সে শীর্ষ ছয়ে পৌঁছেছেন। হুমায়রা শাহজাহান থাইল্যান্ডে জামদানির ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন।
এই বছর উদ্বোধন হওয়া মিস বাংলাদেশ ইমপ্যাক্ট ফোরাম ২০২৫ সৌন্দর্য, কূটনীতি ও সমাজসেবাকে একত্র করেছে। অংশীদার হিসেবে ছিল লে মেরিডিয়ান ঢাকা, হারনেট টিভি ও হারনেট ফাউন্ডেশন। নির্বাচিত ২০ জন প্রতিযোগী এক মাসব্যাপী ফেলোশিপ প্রোগ্রামে অংশ নেবেন, যেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে নেতৃত্ব, জলবায়ু কূটনীতি ও টেকসই উন্নয়নে।
মুকুট উৎসবে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা আলম, ডা. তাসিন আফরিন ডায়ানা, তাহরিন জেরিন, ফেরদৌসি তানভীর ইচ্ছা, জুমানা নাইলাত শখ, মালেকা পারভীন মলি ও তৌহিদুন নাহার দীপ্তি। সহযোগী হিসেবে ছিল পার্টি রেন্টাল, আরাবি ডিজাইন হাউস, ঋতু এবং আন্তর্জাতিক মেকআপ আর্টিস্ট মেহজাবিন সাবা।
মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ প্রমাণ করছে—সৌন্দর্য কেবল চোখে দেখা নয়, বরং দায়িত্ব, সাহস ও সহমর্মিতার এক যাত্রা। সুমাইয়া হারুন এখন শুধু মডেল নয়, তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, পরিবেশ ও মানবতার দূত।
এই মুকুট শুধু প্রতিযোগিতার প্রতীক নয়—এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে নারী নেতৃত্ব, পরিবেশ সচেতনতা ও বৈশ্বিক কূটনীতি একসাথে এগিয়ে চলছে টেকসই ভবিষ্যতের পথে।
মন্তব্য (০)