
শ্রীপুর (গাজীপুর)প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে নারীর সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে এক যুবককে রাস্তা থেকে পাশের জঙ্গলে তুলে নিয়ে ছয় ঘন্টা ধরে অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছে । প্রহার করা হয় মাছ শিকারের টেঁটা দিয়ে। পরবর্তীতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অভিযুক্তরা। মুক্তিপণের টাকার জন্য জোরপূর্বক মোটরসাইকেল নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। অবশেষে রাত ১ টার দিকে জুডিশিয়ারির ষ্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর নিয়ে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়। রাত দুইটার দিকে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে এনে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের পাবুরিয়ারচালা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী যুবক।
ভুক্তভোগী যুবক মো. ওবায়দুল্লাহ (৩২) উপজেলার পাবুরিয়ারচালা গ্রামের মৃত শহিদুল্লাহর ছেলে। তিনি পেশায় একজন মোদী দোকানী।
অভিযুক্তরা হলেন, মো. রেজাউল করিম (৪৫), শহিদ মিয়া (৪৫), সজীব (২০) ও সিয়াম (২০)। এঁরা সবাই চিহ্নিত মাদক কারবারি।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হয় ভুক্তভোগী ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে গ্যাস সিলিন্ডার বোতল আনতে পায়ে হেঁটে পাশের বাজারে যাচ্ছিলাম। এসময় অভিযুক্তরা হঠাৎ করে এসে আমাকে ঝাপটে ধরে পাশের জঙ্গলে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে বলতে থাকে তোর ঐ নারীর সঙ্গে পরকীয়া সে আমাদেরকে অভিযোগ দিছে। এরপর রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলে গামছা দিয়ে। চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। মাছ শিকারের টেঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আঘাত করা হয়। দুই পায়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে। ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর চাওয়া হয় এক লাখ টাকা মুক্তিপণ। পরবর্তীতে ফোন করি স্বজনদের। খবর পেয়ে আমার বৃদ্ধ মা ও শিশুপুত্র ঘটনাস্থলে আসে। তাদের সামনে টেঁটা দিয়ে আঘার করে আমাকে। এরপর অভিযুক্তরা মা'কে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে টাকার জন্য চাপ দেয়। মা ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে অভিযুক্ত শহিদ মিয়ার হাতে দেয়। বাকি টাকার জন্য জোরপূর্বক মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। এরপর অলিখিত তিনটি জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর রেখে ফেলে যায়। ওঁরা সবাই মাদক কারবারি।
ভুক্তভোগীর বৃদ্ধ মা ফরিদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে রাস্তা থেকে অপবাদ দিয়ে তুলে নেয়। এরপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। আমাদের খবর দিলে পাশের জঙ্গলে গিয়ে দেখি ছেলেকে নির্যাতন করছে। আমার সামনে ছেলেকে মুখ বেঁধে টেঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে রক্ত বের করছে। তখন আমি বাবা বাজি বলে তাদের কাছে মুক্তি চায়। কিন্তু ওঁরা বলে আগে টাকা দেন তারপর ছাড়া হবে আপনার ছেলেকে। এরপর ১০ হাজার টাকা দেই রাজাবাড়ি ইউনিয়ন কৃষক দলের । শহিদকে তবুও মানেনি। এরপর জোরপূর্বক মোটরসাইকেল নিয়ে যায় টাকার জন্য। পরে জঙ্গলে ফেলে ওরা চলে যায়। রাতেই ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। ছেলের শরীরে এমন কোন জায়গা নেই যে আঘাত করেনি।
অভিযুক্ত রেজাউল করিমের বক্তব্য নিতে পরপর কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ সব ধরনের আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য (০)