
রংপুর ব্যুরো : রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীতে সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়ার ৪১ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো এইচএসসি পরীক্ষার্থী নীরব রায় উৎসের (১৮) মরদেহ।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিদল মরদেহটি উদ্ধারের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।
নিহত নীরব নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার সদর এলাকার তপন রায়ের ছেলে। তিনি রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।সামনে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। অকাল মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতশনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে নীরবসহ মোট সাত বন্ধু বেড়াতে যান দ্বিতীয় তিস্তা সেতু এলাকায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সবার অগোচরে উৎস তার দুই বন্ধুকে নিয়ে হঠাৎ নদীতে ঝাঁপ দেন। তবে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন ওই দুই বন্ধু। কিন্তু নীরব পানির স্রোতে তলিয়ে গিয়ে আর ভেসে ওঠেননি।
বন্ধুরা চিৎকার করলে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিদল রাতেই উদ্ধার অভিযান শুরু করে। কিন্তু পানির প্রবল স্রোত ও গভীরতার কারণে অভিযান চালিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অবশেষে সোমবার(২৫আগস্ট) সকালে স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে মরদেহ ভেসে ওঠে উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায়। ঘটনাস্থলটি সেতু থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে।পরে ফায়ার সার্ভিস মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশের উপস্থিতিতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
অকাল মৃত্যুর খবরে পরিবারে নেমে আসে মাতম। নীরবের মা ছেলেকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন নদীর তীরে। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। এলাকাবাসী জানায়, উৎস মেধাবী ও ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিল। সামনে পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল করবে-এমন আশা করেছিলেন সবাই।
নিহতের বাবা তপন রায় শোকাভিভূত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল, জানতাম না এভাবে নিখোঁজ হয়ে চিরতরে চলে যাবে। এই শোক কোনোভাবেই সইবার নয়।”
রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা জানান,উৎস নিয়মিত ও পরিশ্রমী ছাত্র ছিল। তার মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানটিতে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান,দ্বিতীয় তিস্তা সেতু এলাকায় ঘুরতে গিয়ে তরুণ-যুবকরা প্রায়ই নদীতে ঝাঁপ দেন। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সেতু এলাকায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তরুণ শিক্ষার্থী নীরব রায় উৎসের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।বন্ধু, শিক্ষক ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। সবাই বলছেন, একটি প্রাণের বিনিময়ে এই ঘটনা যেন শিক্ষা হয়ে থাকে অন্য তরুণদের জন্য।
গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) আব্দুল মান্নান বলেন, “নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে আমাদের ডুবুরিদল তল্লাশি চালাচ্ছিল। দুই দিন চেষ্টা করেও মরদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। সোমবার সকালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ও তথ্যে নদীর পূর্বদিকে মরদেহ ভেসে ওঠে। আমরা দ্রুত উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি।
মন্তব্য (০)