• অপরাধ ও দুর্নীতি

ফরিদপুরে অবৈধ উপায়ে নিয়োগ হওয়ায় বেতন বন্ধ করলেন এক শিক্ষকের

  • অপরাধ ও দুর্নীতি

ছবিঃ সংগৃহীত

ফরিদপুর  প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের সালথা উপজেলাধীন আটঘর ইউনিয়নের পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুনের নিয়োগ অবৈধ প্রমানীত হওয়ায় তার বেতন বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী। তিনি জানান, মাদ্রাসার শরীর চর্চা শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ত্রুটিপূর্ন ও  অবৈধ ছিলো তার প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় হালিমা খাতুনের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। তার বিষয়ে পরবর্তী ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য কাজ চলমান রয়েছে। 

জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসা স্থাপিত হয়। এরপরে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। এদের মধ্যে হালিমা খাতুনের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ ও শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতির অভিযোগ করেন পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি গত ২১ নভেম্বর সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, হালিমা খাতুন ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হিসেবে যোগদান করেন। অথচ তৎকালীন তার দাখিলকৃত বিপিএড পরিক্ষার সনদ যেটিতে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গোপালগঞ্জের সাবেরা রউফ শারিরিক শিক্ষা কলেজ থেকে বিপিএড পরিক্ষা অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যা ২৪ অক্টোবর ১৯৯৫ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসাসমূহ) নীতিমালা বহির্ভূত। এছাড়া ওই সনদে উল্লেখিত রোল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যাচাই করে দেখা যায় যে সনদটির কোনো হদিস নেই।

খোজ নিয়ে জানা যায়, সাইফুল ইসলামের অভিযোগের আলোকে গত ৩ ডিসেম্বর সালথা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বী নোমান সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমার উক্ত বিষয়টি তদন্তকালে দেখতে পান, সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন ২০ জানুয়ারী ২০০০ সালে চাকুরীতে প্রবেশ করেন। সেহেতু ১৯৯৫ সালের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসাসমূহ) এর শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামে সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা (ন্যূনতম) (১) স্নাতকসহ বি.পি.এড প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ থাকতে হবে। অথবা (২) স্নাতকসহ জুনিয়র ডিপ্লোমা/ ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সকল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী বিভাগ থাকতে হবে। সে প্রেক্ষিতে হালিমা খাতুনের চাকুরীতে প্রবেশের সময় বি পি এড/ ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষনের সনদ ছিলনা। পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালে উক্ত সনদ অর্জন করেন- যা ১৯৯৫ সালের মাদ্রাসার জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী সঠিক হয়নি।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন। একই সাথে গত ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১৮.২(ক) নীতি অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত সুপার হালিমার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে জুন মাসে হালিমা খাতুনের পরিপূর্ণ বেতন-ভাতা নিয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিতে আসলে তিনি হালিমা নাম বেতন শীট থেকে কর্তন করে অন্যান্য শিক্ষকদের বেতন ভাতার শীটে স্বাক্ষর করেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন জানান, ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করলেও ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া আলাউদ্দিন ফিজিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে বিপিএড পাশ করেছেন। এছাড়া ২০০৪ সালের জমাকৃত বিপিএড সনদের বিষয়ে কিছুই জানা নেই দাবি করে বলেন, আমার নামে কে বা কারা এটি জমা দিয়েছে, আমি কিছুই জানি না। এছাড়া ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করে ২০১৩ সালের বিপিএড পাশ নীতিমালা বহির্ভূত কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি তখন আমি জানতাম না।

পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. আবু নাসের আহমাদ বলেন, আমি কিছুদিন ধরে এ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে যোগদান করেছি। শরীর চর্চা শিক্ষক হালিমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হালিমা খাতুনের নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই ত্রুটিপূর্ণ ছিলো। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুস্মিতা সাহা বলেন, সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনেক ভাল কাজ করেছেন এই অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে। এই ধরনের অবৈধভাবে যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।

মন্তব্য (০)





image

শার্শার নাভারন সরকারি খাদ্য গুদামে দুদকের অভিযান

বেনাপোল প্রতিনিধি : যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন সরকারি খাদ...

image

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, নেপথ্যে পবিপ্...

পবিপ্রবি প্রতিনিধি: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্য...

image

রূপপুরের আলোচিত বালিশকাণ্ডের দুর্নীতির তদন্ত, ৬ বছরেও হয়ন...

নিউজ ডেস্কঃ গোটা দেশে আলোচনার ঝড় তোলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্য...

image

‎অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা: সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্...

নিউজ ডেস্কঃ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ ...

image

রাজধানীতে মব তৈরি করে চাঁদাবাজি করা সেই সমন্বয়ক হাতেনাতে ধরা

নিউজ ডেস্ক : ধানমন্ডি এলাকায় মব তৈরি করে চাঁদা দাবি করা সেই সমন্বয়কসহ রা...

  • company_logo