ফরিদপুরে বালুমহল ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে ২ জন আহত

ফাইল ছবি

ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বালুমহল ইজারার দরপত্র বাণিজ্যের (নিকো) টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে দুইজন আহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ। 

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাতে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসি মাহমুুদুল হাসান। এর আগে বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১০টার দিকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা (৩২) ও মা ফার্মাসির স্বত্বাধীকারী রিয়াজ মৃধা (৪৭) মারাত্মক আহত হয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। 

জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় ১৪৩২ সালের ১ বছরের জন্য ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার অর্ন্তগত ঘোষপুর ইউনিয়নের মধুমতি নদীর লঙ্কারচর বালুমহল ইজারার দরপত্র আহ্বান করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়। এ ইজারায় ১৫টি দরপত্র বিক্রয় হলেও দরপত্রদাতাদের মাঝে সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্রদাতাদের মাঝে টাকা ভাগাভাগির কথা থাকলেও নিকো-বোর্ড দরপত্র দাতা জুয়েল বিশ্বাসকে পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে বলে। 

এ নিয়ে বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে ‘মা ফার্মাসি মার্কেট’ চত্বরে এক শালিশ বৈঠক বসে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন আলম চান, সাবেক পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা। শালিশ বৈঠক শুনানির সময় একজন দরপত্র দাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতে কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে সেখানে থাকা লোকজন। এসময় জুয়েল বিশ্বাসের কাছে থাকা দেশীয় অস্ত্রটি কেড়ে নিতে শালিশে বসা বিএনপির লোকজনের ধস্তাধস্তি হয়। কিছুক্ষণ পরেই জামায়াত কর্মী জুয়েলের ২৫-৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মা ফার্মাসি চত্বরে আক্রমন করে। এ সময় বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা ও মা ফার্মাসির স্বত্ত্বাধীকারী রিয়াজ মৃধা মারাত্মক আহত হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত সোয়া ১০টার দিকে কাঠের বাটাম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায় বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে ‘মা ফার্মাসি মার্কেট’ চত্বরে বালু মহলের দরপত্র নিয়ে চলা এক শালিশ বৈঠক। এ সময় মা ফার্মাসিতে আশ্রয় নেওয়া বিএনপি নেতা রাসেল আহমেদের ছোট ভাই কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার মাথা ফেটে যায় এবং আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন মা ফার্মেসীর স্বত্ত্বাধীকারী রিয়াজ মৃধা (৪৭)। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ।

দরপত্রদাতা পৌর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জুয়েল বিশ্বাস জানান, বালুমহলের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিলো রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। সে টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মাসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে আমার উপর আক্রমণ করে। খবর পেয়ে আমার গ্রামের ভাই-ব্রাদার আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিনকে পেয়ে তারা (সংঘবদ্ধ দল) তাকে মারধর করে। জুয়েল বিশ্বাস জামায়াত কর্মীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী পৌর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা নিয়ামুল হাসান। 

এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ জানান, জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার জুয়েল বিশ্বাস আমার নিকট চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে সে পরিকল্পনা করে  আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোকজন প্রস্তুত রেখে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসে। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের উপর হামলা চালায়। জীবন রক্ষার্থে আমি পালিয়ে গেলেও আমার ছোট ভাই মা ফার্মাসিতে আশ্রয় নিলে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে তারা।

বোয়ালমারী পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ মৃধা জানান, রাসেলের সাথে জুয়েল বিশ্বাসের দেনা পাওনা নিয়ে ফোনে কথা কাটাকাটি হলে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মাসিতে আসে জুয়েল বিশ্বাস। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারলো অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এসময় সে পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর জুয়েল ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল নিয়ে আমাদের ফার্মাসিতে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় আমার বড় ভাই ও ছাত্রদলের কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার উপর হামলা চালায় এতে মারাত্মক আহত হয়। 

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান জানান, ঘটনার দিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় হামলায় আহতরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।