কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: করোনাকালীন কাজ হারানো বিদেশ ফেরত যুবক কর্মী বা ছাত্র যুবকদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির খাত হিসেবে কৃষিই হতে পারে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এমন অবস্থায় আখ চাষ করে এই যুবকরাই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার কলেজ ছাত্র রাকিব ও বিদেশ ফেরত যুবক বেল্লু মন্ডল। স্থানীয়দের মতে, বেকার অলস সময়কে কাজে লাগাতে পারলে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছাড়াও রোধ হবে সামাজিক অবক্ষয়। কৃষি
বিভাগ বলছেন, কৃষি খাতে নিজ উদ্যোগে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তরুণ/যুবরা এগিয়ে আসলে তাদের জন্য সরকারী ভাবে নানামুখী সহায়তা প্রনোদনা দিচ্ছে সরকার।
কলেজ ছাত্র রকিব বলেন, ‘ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে অলস সময় ব্যয় করে কি লাভ বরং রুটিন মাফিক কিছু সময় মাঠে পরিশ্রম করলে কিছু না কিছু
আসবেই। গত ডিসেম্বরে আমি লিজকৃত সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে গ্যান্ডারী (আখ) লাগাই। সার বীজ শ্রমিকসহ এ পর্যন্ত ৪ লাখ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি ১৫হাজার পিচ গ্যান্ডারী হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতারা জমি থেকেই প্রতি পিচ গ্যান্ডারী ২৫ থেকে ৩০ দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সবমিলে ৬০হাজার পিচ গ্যান্ডারী বিক্রী থেকে আয় হবে ১৫ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা।
উপজেলার গোবিন্দগুনিয়া গ্রামের বিদেশ ফেরত বেল্লু মন্ডল বলেন, ২০১৫ সালে জমি বন্ধক রেখে সাড়ে ৩লাখ টাকা খরচ করে ওমান গিয়ে হারভাঙ্গা খাটুনির সাথে মানবেতর জীবন। চার বছর কাজ করেও খরচের টাকা তুলতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরে এই লিজকৃত জমিতে শ্রম দিচ্ছি। আমি তো দেখছি,
সোনার বাংলার সোনা ফলানো মাটিতে শ্রম দিলে সফলতা আসবেই। গ্যান্ডারি আখসহ সমন্বিত সব্জি চাষ করে বছর শেষে একটা মানুষের হালাল পথে ৬থেকে ৭লাখ টাকা আয় হয় তাহলে আর কি লাগে? তবে এক্ষেত্রে সরকারী ভাবে সহজ শর্তে ঋণসহ সহায়তা পেলে আরও অনেক বেকার কর্মহীন কর্মক্ষম মানুষ
নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে বিশ্বাস তাঁর। উপজেলার আমলা গ্রামের খুচরা আখ বিক্রেতা জামিরুল জানায়, আগে এই গ্যান্ডারী আখ যশোর, সাতক্ষীরা, নাটোর বা অন্যান্য জেলা থেকে বাসে ছাদে কিংবা ট্রাকে বা নছিমনে বহন করে আনতে অনেক ভোগান্তি ও ঝামেলা পোহাতে হতো, খরছও হতো বেশী। এখন এলাকাতেই আখ চাষ হওয়ায় সহজে কম খরচে সংগ্রহ করে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করে বেশ ভালো লাভ হচ্ছে। প্রতি একটি গ্যান্ডারী সাইজ অনুযায়ী জমি থেকে ২৫ বা ৩০টাকা দলে কিনে সেগুলি খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০টাকা করে বিক্রী করছি। ২০/৩০ পিচ গ্যান্ডারী বহন করে বাজারে নিয়ে যেতে পারলেই বিক্রী হয়ে যায়। ৩নং চিথলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন পিস্তল বলেন, গ্যান্ডারী চাষী যুববকদ্বয়ের কাজটি অন্যদের কাছেও অনুসরনযোগ্য হতে পারে। ছাত্র যুবকরা বেকার-অলস না থেকে বা মাদক ছেড়ে এভাবে কৃষি কাজে সফলতার মাধ্যমে স্বাবলম্বি হতে চাইলে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সব ধরণের সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কর্মক্ষম ছাত্র-যুবক বা করোনাকালীন সংকটে কর্মহীন হয়ে পড়া বা বিদেশ ফেরত যুবকরা হতাশ না হয়ে কৃষি খাতের কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা নিজেরাই স্বাবলম্বি হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবেন। বর্তমান কৃষি খাতে এমন বেশ কিছু অধিক লাভজনক ফসল আছে যা চাষ করতে পারলে ওই কৃষকে আয়ের সাথে কোন সরকারী চাকুরীরত ব্যক্তির চেয়ের সচ্ছল জীবন-যাপন সম্ভব। এক্ষেত্রে যে কেউ উদ্যোগী হয়ে মাঠে নামলে সরকার ও কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ সব রকম সহায়তা নিয়ে সর্বদা তাদের পাশে আছে।
মন্তব্য ( ০)