• সমগ্র বাংলা

নড়াইলে বিশাল জমজমাট ষাড়ের লড়াই

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৬ জানুয়ারী, ২০২০ ১৮:৫৯:২৮

 নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে সুলতান মেলায় ঐতিহ্যবাহী ষাড়ের লড়াই। বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নড়াইলে অনুষ্ঠিত ১৩ দিন ব্যাপী সুলতান মেলায় ঐতিহ্যবাহী ষাড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের কুড়িরডোপ মাঠে এ লড়াই হয়। জমজমাট ষাড়ের লড়াই দেখতে ভীড় করেছিলো নড়াইল ও এর পার্শবর্তী খুলনা,মাগুরা ও যশোরের কয়েক হাজার মানুষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অর্ধ শতাধিক ষাঁড় এ লড়াই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, সমানে সমানে শুরু হয় দফায় দফায় লড়াই। এ সময় মাঠের চারি পাশে চলতে থাকে উৎসুক দর্শকদের উল­স। সকাল থেকে মাঠের মধ্যে আসতে থাকেন উৎসুক দর্শক, কেউ কেউ আবার দুপুরে না খেয়েই উপভোগ করেন আকর্ষনীয় এই লড়াই। লড়াই এ ভীত ষাড় আবার দর্শকদের আহত করে ও পালিয়ে যায়। উত্তেজনা আর ভয় নিয়ে দর্শকেরা হাজার বছরের এই ঐতিহ্যবাহী ষাড়ের লড়াই উপভোগ করেন। প্রতিবছরই সুলতান মেলায় এই লড়াই এর আসর বসে । প্রতিবারই বাড়ছে লড়াই করা ষাড়ের সংখ্যা আর দিন দিন উপভোগ্য হচ্ছে গ্রামের মানুষের প্রানের এই খেলা। দর্শনার্থীরা বলছেন ,তারা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন কবে সুলতান মেলা হবে আর তারা এই খেলা দেখতে পারবেন । এর আগে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠের সুলতান মঞ্চ চত্বরে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা ৪টায় ১৩ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মু: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। এবারের মেলাকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উৎসর্গ ঘোষনা করেন প্রধান অতিথি। মেলায় প্রতিদিনই দুপুরের পর থেকে রাত অবদি থাকছে চিত্র প্রদর্শনী, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। এসকল অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় করছে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। ঐদিন মেলা উপলক্ষে প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। মেলাকে ঘিরে গোটা শহরে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। ব্যানার-ফেষ্টুনে ছেয়ে গেছে মেলা প্রাঙ্গন। উদ্বোধনের দিন থেকেই মেলা ষ্টলে নারী, শিশু ও পুরুষের ভীড় ছিল লক্ষ্যনীয়। মেলাকে উপভোগ্য করে তুলতে প্রত্যহ সন্ধ্যায় সুলতান মঞ্চে রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগামি ২৭ জানুয়ারি বিকেলে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। মেলা চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। সূত্রে জানা যায়, এবারের মেলায় থাকছে এসএম সুলতান ও বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের আঁকা চিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন গ্রামীণ ক্রীড়া উৎসব-হাডুডু,কুস্তি,ঘোড়ার গাড়ীর দৌড়,ষাঁড়ের লড়াই,দড়ি টানাটানি, ভলিবল খেলা, মহিলাদের ভলিবল প্রতিযোগিতা, কাবাডি,শরীর গঠন প্রতিযোগিতা, লাঠিখেলা, কলাগাছে ওঠা,বাঁশের লাঠির দৌড়,জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃতি, নাটক, জারিগান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,সুলতান স্বর্ণপদক প্রদান ও সুলতানের জীবন ও দর্শন নিয়ে প্রত্যহ সেমিনার। এদিকে, ১৩ দিনব্যাপী সুলতান মেলাকে কেন্দ্র করে নড়াইলের সাংস্কৃতিক অঙ্গনগুলো জেগে উঠেছে। মেলায় গ্রামীণ কুঠির শিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ১০০টি ষ্টল বসেছে। মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুর রশিদ জানান, চিত্রশিল্পী সুলতান তার অংকিত ছবির মাধ্যমে ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছেন। সুলতান তার চিত্রশিল্পের মাধ্যমে মানুষের বোধের গভীরতা তৈরি করেছেন। মেলাকে ঘিরে নড়াইলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ আমেজ বিরাজ করছে। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগষ্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট অব আর্টিষ্ট হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯৯৪ সালে ১০ অক্টোবর মহান এই শিল্পী দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর যশোর সম্মিলিত হাসপাতালে শেষ-নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo