কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে এক দিনের ব্যবধানে কাচা মরিচ কেজি প্রতি ৩০০ টাকা কমিয়ে পাইকেরিতে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। গতকাল সোমবার কাচা মরিচ কেজি প্রতি ৬০০ টাকা বিক্রি হওয়ায় সাধারণ মানুষ পড়ে যায় বিপাকে। কাচা বাজারের ঊর্ধ্বগতি দামে নিম্ন আয়ের মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সকল প্রকার সবজিতেও নেই স্বস্তি। মরিচ, বেগুন, আলু ও পেঁয়াজ সহ অনেক নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরুপায় ক্রেতারা। চলমান ঊর্ধ্বগতি বাজারে কিছুতেই হিসেব মিলছে না মানুষের। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনেক সবজির দাম। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এখন সকল প্রকার সবজি সহ বেগুন, কাচা মরিচ, আলু ও পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন থাকায় ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের। নিরুপায় হয়ে সবজি সহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র চাহিদার তুলনায় কম ক্রয় করছেন।
উলিপুর পৌর বাজারের আড়তদার সবজির বাড়তি দামে বেগুন কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, মরিচ ৩০০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১২০ টাকা, এলছি পেঁয়াজ ১১০ টাকা। খুচরা বিক্রেতা তা বিক্রি করছেন ১০০ টাকা ১২০ টাকা ও ৩৫০ টাকা। নানা ভাবে পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, বেগুন, মুলা ও করলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। হাত বদলেই বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। সারা বছর জুড়ে অন্যান্য জেলা থেকে সবজি আমদানি করতে হয় বলে এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত হয়ে আসছে বলে জানান বিক্রেতারা। তারা আরও বলেন, গত কাল কাচা মরিচ মোকামে না পাওয়ায় দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিলো। তবে তারা জানান, স্থানীয় ভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়া সবজি আমদানি হলে কিছুটা দাম কমতে শুরু করবে।
সরেজমিন মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে উলিপুর সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পাইকারদের কাছে বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৮০ টাকা তা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, আলু দেশি ৬০ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, আলু হলান্ড ৫৬ টাকা খুচরায় ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা খুচরায় ৩৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, পেঁয়াজ এলসি ১১০ টাকা খুচরা ১২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা খুচরায় ১৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা খুচরায় ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা খুচরায় ৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা খুচরায় ২৪০ টাকা, আদা ২৪০ খুচরায় ২৮০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩৮০ টাকা খুচরায় ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ঢেড়স ৫০ টাকা খুচরায় ৬০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা খুচরা ৬০ টাকা, কদোয়া ৫০ টাকা খুচরা ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা খুচরা ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা খুচরা ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ছোট বড় ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা খুচরায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধনেপাতা ১৬০ টাকা খুচরা ২০০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা খুচরায় ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিচ ৭০ টাকা, খুচরায় ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাক-সবজির এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
খুচরা সবজি বিক্রেতা জিয়ন মিয়া (৪৫), মাইদুল ইসলাম (৩৮), নুর ইসলাম (৬৫) ও দুলাল মিয়া জানান, আমরা পাইকারি দামের চেয়ে সামান্য লাভ করেই সবজি বিক্রি করে থাকি। কিছুদিন আগে সবজির বাজার কম ছিল। তাই ক্রেতারা বেশি ক্রয় করত। এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় কম ক্রয় করছেন। এখন স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজির আমদানি না হওয়ায় দাম বেড়েছে বিক্রিও কমেছে।
ক্রেতা মফিজল হক (৭০) বলেন, সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এটা সম্পূর্ণ কারসাজি। বাজার তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজার ঘুরে দরদাম সম্পর্কে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে ৪০ থেকে ১২০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই।
খুচরা বাজারে সবজি নিতে আসা গৃহবধূ স্বপ্না আক্তার (৪০), হাওয়ানুর বেগম (৩৮) ও ইউনুস আলী (৬৫) বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে আজ সবজির কেজি প্রতি ২০-৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার কিছু কিছু সবজির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মরিচ ছিল ৬০০ টাকা আজ ৩৫০ টাকা কেজি, আলু ছিল ৫৫ টাকা আজ ৬৫ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ছিল ১১০ টাকা আজ ১২০ টাকা কেজি, পটল ৬০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ৮০ টাকা কেজি, বেগুন ৮০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ১০০ টাকা কেজি, মুলা ৪০ টাকা থাকলেও আজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ে সবজির দাম অনেক কম ছিল। এ বছর এ সময়ে সবজির দাম অনেক বাড়তে শুরু করছে। এছাড়া মরিচের দাম, বেগুনের দাম, করলার দাম, পেঁয়াজের দাম ও আলুর দাম না কমিয়ে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন চলা খুব কঠিন হয়ে গেছে বলে জানান তারা।
সবজি বাজারের আড়তদার মুকুল মিয়া (৬৮), আলম মিয়া (৬৫) ও আনারুল মিয়া (৪৫) বলেন, বর্তমান স্থানীয় ভাবে সবজির আমদানি না হওয়ায় সবজির দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। তাছাড়া মরিচ, আলু, বেগুন ও পেঁয়াজ সহ অন্যান্য সবজির বাজার বৃদ্ধি রয়েছে। স্থানীয় ভাবে সবজির আমদানি শুরু হলে কিছুটা কমতে শুরু হবে। এছাড়া আমাদের এলাকায় ধান, পাট, ভুট্টা বেশি চাষাবাদ করা হয়। এ কারণে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে সবজি নিয়ে আসতে হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও থেকে। তারা আরও বলেন, ওই জেলার মোকাম (পাইকারি বাজার) গুলোতে সবজির দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের এখানে আমদানি কমে যায় ফলে দামও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া গাড়ি ভাড়ার উপর কিছুটা দাম কম বা বেশি হয়। কাচা মরিচের বাজার হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে বলেন, গতকাল সোমবার কাচা মরিচের আমদানি কম ছিলো তাই দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছিলো। এছাড়া হঠাৎ সবজির এমন বাড়তি দাম সম্পর্কে কাঁচা বাজারে বিক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সবজির সরবরাহ কম। অনেক ধরনের সবজির মৌসুম এখন মাত্র শুরুর দিকে। ফলে স্থানীয় ভাবে যে সব সবজির আমদানি কম সেসব সবজির দাম বাড়তি। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সবজি কম হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম আসায় পাইকারি বাজারগুলোতেই সবজির দাম বাড়তি। সে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া আলু, শসা, মরিচ ও বেগুনের বাজার দর বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, মোকামে মরিচ ও বেগুনের চালানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই আমারও বেশি দামে বিক্রি করছি বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, এবারে অসময়ে বর্ষা ও বন্যার কারণে স্থানীয় পর্যায় সবজি চাষে ব্যাঘাত ঘটছে। স্থানীয় ভাবে সবজির আমদানি না হলে বাজারে সবজির মূল্য স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। আরও বলেন, স্থানীয় ভাবে যে সকল সবজি চাষ হয় তাতে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। কৃষকদের বেশি বেশি করে সবজি চাষের পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য ( ০)