নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরের ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে আগের ঐতিহ্যে ফিরতে শুরু করেছে। নানাবিধ ব্যতিক্রমী পদক্ষেপের মাধ্যমে নতুন রূপে সাজছে বিদ্যালয়টি। বিশেষ করে চলতি মাসের ০১সেপ্টেম্বরে বিতর্কিত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের প্রস্থানের মাধ্যমে স্থানীয় সচেতন মহলের সহযোগিতায় স্ব-মহিমায় ফিরতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মোকলেছুর রহমান বাবু বলেন উপজেলার যতগুলো
প্রসিদ্ধ বিদ্যাপিঠ রয়েছে তার মধ্যে ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম। ১৯৮৬সাল থেকে বিদ্যাপিঠটি স্বনামের সঙ্গে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। আমি যতদিন সভাপতি ছিলাম ততদিন স্কুলে একটি সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার চেস্টা করেছি। কিন্তু ২০১২সাল থেকে যখন বিদ্যালয়ে রাজনৈতিক প্রভাব প্রবেশ করে তখন থেকে বিদ্যালয়টি তার সুনাম হারিয়ে দুর্নামের তালিকায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে। বিগত আ’লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্কুলগুলোর। এরপর বিগত সরকারের প্রভাব খাটিয়ে গত ২০২১ ও ২০২২সালে স্কুলের শিক্ষক সায়মা ইয়াসমিন ও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দ্বন্দ্বের বলিতে নেতিবাচক নানা ধরণের পাল্টাপাল্টি কর্মকান্ডের কারণে নতুন করে বিদ্যালয়টি তার সুনাম হারিয়ে দুর্নামের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।
এরপর ২০২৩সালে জোরপূর্বক স্কুলের জুনিয়র শিক্ষক শহিদুল ইসলামের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করার ঘটনা স্কুলটিকে বিতর্কের শীর্ষে তুলে নিয়ে আসে। এই রকম নেতিবাচক নানা ঘটনা এবং স্কুলের শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তিনি আরো বলেন গত আগস্টে আ’লীগ সরকারের পতনের পর আবার নতুন করে স্কুলটিতে পূর্বের মতো সুন্দর, স্বাভাবিক ও পাঠদানের জন্য ছিমছাম একটি পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা স্থানীয় সচেতনমহল, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নানা রকমের পজেটিভ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যেই স্কুলের একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক মো: আব্দুল মোত্তালিব স্যারকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পন করা হয়েছে।
অতিদ্রুত আমরা সভাপতির অনুমতি সাপেক্ষে একটি অভিভাবক সমাবেশেরও আয়োজন করবো। আগামীর দিনগুলোয় স্কুলটিকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের মাঝে সুস্থ্য পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চাই। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন রাজনৈতিক যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে প্রিয় বিদ্যাপিঠটির সুনাম বলতে আর তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। নতুন বাংলাদেশের নতুন প্রত্যয়ে আবার আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিদ্যাপিঠটিকে তার পূর্বের স্বমহিমায় ফিরে আনতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী কমিটি গঠন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
যে কমিটির সদস্যরা বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম মনিটরিং করবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে গোপনে সংগ্রহ করা হবে সমস্যার কথা। এছাড়া বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষকের সকল কর্মকান্ড কঠোর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে কমিটির পক্ষ থেকে মাসিক একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে। আমি আশাবাদি গ্রহণ করা পদক্ষেপগুলো যদি আমরা সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আমি আশাবাদি এই রকম পজেটিভ কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি একটি ব্যতিক্রমী বিদ্যাপিঠে পরিণত হবে। দ্যিালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো: আব্দুল মোত্তালিব বলেন রাজনৈতিক অনেক ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে বিদ্যালয়টি তার আগের স্থানে ফিরে যেতে শুরু করেছে। বিদ্যালয়টিকে আগের অবস্থানে ফিরে আনা বর্তমানে আমাদের কাছে বড় একটি যুদ্ধ। তবে বিদ্যালয়ে এখনোও কিছু সংকট রয়েছে। বিশেষ করে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক খুবই প্রয়োজন।
২০২১সাল থেকে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া তিনজন শিক্ষক ও ৪টি কর্মচারীর পদ দীর্ঘদিন যাবত ফাঁকা রয়েছে। ফলে প্রতিদিন ১১২জন শিক্ষার্থীদের মাঝে সুষ্ঠ ভাবে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষককে প্রায় দিনই বিভিন্ন দাপ্তরিক কর্মকান্ড নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই প্রতিদিন শিক্ষকদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করতে একজন সহকারি প্রধান শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। এতো সংকটের মধ্যেও নতুন স্বপ্নকে হৃদয়ে ধারণ করে নানা ভালো কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রিয় বিদ্যালয়টিকে আবার তার আগের স্থানে ফিরিয়ে নিতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
মন্তব্য ( ০)