পবিপ্রবি প্রতিনিধি: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন পদের নিয়োগ কেন অবৈধ হবেনা তার কারণ জানতে সাবেক উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারসহ চারজনের বিরুদ্ধে গত ২৮ আগস্ট বুধবার রুল নিশি জারি করেছে হাইকোর্ট। সেকশন অফিসার পদে শামসুল হুদা রিফাত নামের এক চাকুরি প্রত্যাশীর দায়েরকৃত ৯৫৮১২০২৪ নং রীট পিটিশনের শুনানী শেষে মহামান্য হাইকোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইউজিসি চেয়ারম্যান, পবিপ্রবির উপাচার্য ও রেজিষ্ট্রারকে ওই রুল নিশি প্রদান করেন। বাদি পক্ষের কৌশলী মোহাম্মাদ জুলফিকার আলী ওই রুল নিশি জারির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর ৩ জনসহ অন্যান্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রারের দপ্তর। সেকশন অফিসার পদের জন্য রীটকারী শামসুল হুদা রিফাত (মামলার বাদী) আবেদন করেন। ফলে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর বাদীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলে তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক-কর্মকর্তা পদে বাছাইয়ের জন্য একাধিক কমিটি গঠন করে যা বিধিবহির্ভূত বলে বিবরণে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ড কমিটির চেয়ারম্যান উপাচার্য হওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান হন ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে তৎকালীন রেজিস্ট্রার (অ. দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসুকে সদস্যসচিব এবং অধ্যাপক ড. পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য করা হয়।
পরবর্তীতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুটি বাছাই বোর্ড কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ছেলে শাওন সামন্ত তনু, উপ-রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন বাদলের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, পবিপ্রবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েলের ভাই মো. আরিফুর রহমান পিয়েল, শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেকের ভাই মো. হাফিজুর রহমান, দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালামের ছেলে তানভীর হাসান স্বাধীন ও জেলা যুবলীগের সম্পাদকের স্ত্রী তাকছিনা নাজনীনকে সুপারিশ করে।
গত ২ ডিসেম্বর রিজেন্ট বোর্ডের ৫২ তম সভার চেয়ারম্যান (পদাধিকার বলে) স্বদেশ সামন্ত ক্রমিক ২ এ সুপারিশকৃত প্রার্থী ও নিজের পুত্র শাওন সামন্ত তনুকে সুপারিশ করা হয়! সেকশন অফিসার পদে বিজ্ঞাপিত ৩ জনের স্থলে ৬ জনকে সুপারিশ করা হয়। পরে ৩ ডিসেম্বর নিয়োগপ্রাপ্তদের ডাক্তারি পরীক্ষার কথা থাকলেও ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা যত্র তত্র যোগদান করেন!
বিবরণে আরও বলা হয়, সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও টাকা লেনদেনের গুঞ্জন রয়েছে। এ প্রক্রিয়ার কারণে মামলার বাদী সামসুল হুদা উপযুক্ত প্রার্থী হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি সেকশন অফিসারসহ অন্যান্য পদের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (অ. দা.) অধ্যাপক ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন, “এখনো কোনো কাগজপত্র পাইনি তবে শুনেছি বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।” নিয়োগ বাতিল হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, “নিয়োগ বৈধ প্রক্রিয়ায় না হলে বাতিল হওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর পবিপ্রবিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সাবেক উপাচার্যের ছেলেসহ ৫৮ জনকে নিয়োগের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৪ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের উপসচিব স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামানকে আহবায়ক ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম শেখকে সদস্যসচিব এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল আলিমকে সদস্য করা হয়।
মন্তব্য ( ০)