• রাজনীতি

রংপুরে শিক্ষার্থী হত্যা:শেখ হাসিনা-কাদের,কামালের নামে মামলা

  • রাজনীতি
  • ১৮ আগস্ট, ২০২৪ ১৮:০০:২৩

ছবিঃ সিএনআই

রংপুর ব্যুরো: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরে আব্দুল্লাহ আল তাহির হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের,সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

রোববার (১৮ আগস্ট)দুপুরে রংপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাহিরের বাবা আব্দুর রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।নিহত আব্দুল্লাহ আল তাহির পেশায় একজন প্রকৌশলী। তিনি ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরীতে কর্মরত ছিলেন।নিহত তাহির রংপুর নগরীর বাসিন্দা ।

মামলার অপর আসামিরা হলেন-সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ,সাবেক বস্ত্র পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক,রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি মোঃ আব্দুল বাতেন, সাবেক পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ উত্তম কুমার পাল,এডিসি ক্রাইম উৎপল কুমার রায়, মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম সায়াদাত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায় মাজেদ আলী বাবুল, সাবেক মহিলা এমপি নাসিমা জামান ববিসহ পুলিশ-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ১৯ জুলাই বিকেলে রংপুর নগরী রামমোহন মার্কেটের সামনে ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামীদের নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় একাধিক গুলিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসের শিক্ষার্থী  আব্দুল্লাহ আল তাহেরের শরীরের পেটের মাঝ বরাবর গুলি ঢুকে ছিদ্র হয়ে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায় মামলার আবেদন এবং কিছু গুলি শরীরের লেগে যখন প্রাপ্ত হয়। এ সময় তাহির মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পুলিশ তাকে ভ্যানে করে নিয়ে যায়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তাহিরের লাশ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তিনি।মামলাটি রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি আমলি আদালতে করা হয়েছে।

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম পাল, এডিসি (অপরাধ) উৎপল কুমার রায়, এডিসি (ডিবি) নুর ইসলাম পাটোয়ারী, কোতোয়ালি থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদাত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক , সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রামাণিক, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলামসহ রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩০০ জন।

আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) সিটি বাজারের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয় এতে গুলিতে নিহত হন আবদুল্লাহ আল তাহির।

অন্য দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় প্রায় এক মাস পর আদালতে মামলার আবেদন করেছেন তার বড় ভাই রমজান আলী।

একই দিনে তাজহাট মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে এ আবেদন করেন।শুনানি শেষে আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ তাজহাট থানাকে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এই মামলার আবেদনে আসামি করা হয়েছে তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন,রংপুর ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, থানার ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের এএসআই সৈয়দ আমীর আলী, সুজন চন্দ্র রায়।

এছাড়া আসামি করা হয়েছে-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামিম মাহফুজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ, বেরোবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকে। অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী রমজান আলী সাংবাদিকদের বলেন, নানা কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।

আইনজীবী রায়হানুজ্জামান বলেন, আমরা ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে তাজহাট থানাকে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। এ ঘটনায় ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সে মামলায় আসামি করা হয়েছিল আন্দোলনকারীদের।

গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ।

নিহত আবু সাঈদের বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জে। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

অন্যদিকে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ তিনজন নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৮ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী,শিক্ষার্থী তাহিরের বাবা আব্দুর রহমান ও ফল ব্যবসায়ী মেরাজুলের মা আম্বিয়া বেগম মামলাগুলো দায়ের করেন। 

আবু সাঈদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাহানুজ্জামান জানান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, রংপুর বিভাগের ডিআইজি আব্দুল বাতেনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী তাহির হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাহিরুজ্জামান জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ফল ব্যবসায়ী মেরাজুল হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মেছবাহুল জামান জানান, এ মামলায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।   

গত ১৬ জুলাই পুলিশ ও কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে রাবার বুলেটের আঘাতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদ।এর পর থেকেই নতুন মাত্রা পায় কোটাবিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলন পরে রূপ নেয় ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে। এতে পদত্যাগ করে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এর মধ্যে দিয়ে পতন হয় ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের।  

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo