অর্থনীতি ডেস্কঃ বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা, শুল্কমুক্ত রপ্তানিসহ অনেক সুবিধা সীমিত হয়ে যাবে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানি খাতকে বিকল্প সুবিধা হিসেবে বিদ্যুৎ বিলে ছাড়সহ বিভিন্ন নীতি সহায়তার প্রস্তাব রেখে নতুন রপ্তানি নীতির খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে খসড়া রপ্তানি নীতি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অসুস্থ থাকায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি জানান, বৈঠকে রপ্তানি নীতি (২০২৪-২৭) খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাবে। নতুন নীতিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়া, নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকার রয়েছে।
তিনি জানান, রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করতে আর্থিক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণে নতুন রপ্তানি নীতিতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ থেকে ২০২৭ মেয়াদে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া খাতের মধ্যে তৈরি পোশাক, ডেনিমের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় নতুন কিছু পণ্য ও সেবা যেমন– সবজি, হস্ত ও কারুপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রপ্তানি নীতির খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, নগদ প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে প্রধান রপ্তানি পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ বিলের ওপর ৫ থেকে ১০ শতাংশ রেয়াত দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে নগদ সহায়তার পরিবর্তে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল ইত্যাদি সার্ভিস খাতে রেয়াতি হারে পরিশোধের সুযোগ বা ভর্তুকি দেওয়া যায় কিনা– তা পরীক্ষা করে দেখার প্রস্তাব রয়েছে। বিশেষ করে শিল্পে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের চার্জ যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
খসড়া নীতিতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের লাইসেন্সিং ফি মওকুফ করার কথা বলা হয়েছে। মূলধনি ও খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানিতে আরোপিত শুল্কহার সর্বোচ্চ ১ শতাংশ বহাল রেখে বাকি সব ধরনের শুল্ককর থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পে বিশেষ রেয়াতি হারে অগ্নি ও নৌ বীমার প্রিমিয়াম নির্ধারণের সুপারিশ রয়েছে।
রপ্তানির অর্থসংস্থান বিষয়ে বলা হয়, রপ্তানি সম্প্রসারণ ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে। ইডিএফ রপ্তানিমুখী যেসব শিল্পকারখানায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, সেগুলোতে গ্রিন এনার্জি ইউনিট স্থাপনের জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করবে। বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র (ইটিপি) এবং পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণের জন্যও ঋণ দেওয়া হবে। রপ্তানি পণ্যের জন্য আমদানি করা কাঁচামালের ওপর শুল্কহার ধীরে ধীরে কমানো হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য একটি কেন্দ্রীয় বন্ডেড ওয়্যারহাউস স্থাপনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
নতুন রপ্তানি নীতি বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, দেশের এলডিসি-পরবর্তী রপ্তানি পরিস্থিতি সরকারের নীতির ওপর নির্ভর করবে। তবে নীতি সহায়তা হতে হবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সঙ্গে সমন্বিত ও প্রয়োগযোগ্য। তা না হলে পরে এসব সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারত রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউটিওর কাছে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। ভারত বেশ কয়েকটি সুবিধা প্রত্যাহারের চিন্তা করছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রপ্তানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর অন্তর রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করা হয়। বিদ্যমান রপ্তানি নীতির (২০২১-২৪) মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। এ ধারাবাহিকতায় ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য রপ্তানি নীতি হচ্ছে।
মন্তব্য ( ০)