নওগাঁ প্রতিনিধি: দামী মসলাজাতীয় অর্থকরী ফসল হচ্ছে জিরা। বর্তমানে দেশে জিরার চাহিদার পুরোটায় আমদানী করা হয় বিদেশ থেকে। আর পরীক্ষামূলক ভাবে এই মূল্যবান জিরা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার শিয়ালা গ্রামের আধুনিক কৃষক জহরুল ইসলাম বাদল। পরীক্ষামূলক এই জিরা চাষে বাম্পার ফলনে জহুরুল যেমন খুশি তেমনি ভাবে জিরা চাষে আগ্রহ বাড়ছে অন্য কৃষকদেরও। প্রতিনিয়তই দেশের মাটিতে চাষকৃত জিরা দেখতে ভিড় করছেন দেশেরবিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত দর্শনার্থীরা।
কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদল জানান দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন দামী উচ্চ ফলনশীল সবজি চাষ করে আসছেন তিনি। বাজারে জিরার দাম বেশি হওয়ায় জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হন জহুরুল। এরপর অনলাইনে এর চাষাবাদ পদ্ধতি দেখে ভারত থেকে প্রায় ১হাজার টাকা খরচ করে বেগুনি ফুলের জাতের ৫০০ গ্রাম জিরার বীজ সংগ্রহ করেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে সরিষা যেমন ভাবে চাষ করা হয় একই ভাবে ৫শতক জমিতে এই জিরার বীজ বোপন করেন জহুরুল ইসলাম। গাছে যতগুলো ফুল ছিলো ততগুলোই জিরা ধরেছে। বর্তমানে জিরা পরিপক্ক হয়েছে। ৫শতক জমি থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি জিরা পাওয়ার আশা করছেন তিনি। জহুরুলের জমিতে উৎপাদিত জিরার গন্ধ ও স্বাদ অতুলনীয় এবং বাজারে পাওয়া জিরার চেয়ে অনেক ভালো। রোগবালাই একেবারেই নেই এবং পানি সেচও দিতে হয় না। তাই কম খরচ ও কম পরিশ্রমে দেশের মাটিতে এমন দামী মসলা ফসল চাষ করে আর্থিক ভাবে অধিক লাভবানও হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষক জহুরুল। শীতকালীন এই ফসলের বীজ বোপণের ৩থেকে সাড়ে ৩মাস সময় লাগে জিরা ঘরে তুলতে। দেশের মাটিতে বিশেষ করে উত্তরের খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁর মাটিতে জিরাসহ আরো অন্যান্য দামী মসলা জাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব সেটাই প্রমাণ করেছেন চাষী জহুরুল ইসলাম। আগামীতে তিনি আরো বেশি পরিমাণ জমিতে জিরার আবাদকরবেন বলে জানান।
বগুড়ার গাবতলী এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থী মোতালেব হোসেন জানান দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো জিরার গাছ দেখতে এসেছি। জহুরুল ভাইয়ের জমিতে হওয়া জিরার গন্ধ অতুলনীয়। আরো কৃষকরা যদি জিরার চাষ করে তাহলে আমদানী নির্ভর এই ফসলটি আগামীতে বাজারে সহজেই কম দামে পাওয়া সম্ভব। তাই আমিও আগামীতে কিছু জমিতে জহুরুল ভাইয়ের মতো জিরার আবাদ করবো। একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী বলেন এটা ভালোলাগার একটি বিষয় যে আমার এলাকার একজন সৌখিন কৃষক জহুরুল দামী মসলা ফসল জিরা চাষে সফল হয়েছেন। জহুরুল জিরা চাষে বাম্পারফলন পেয়ে দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন। জহুরুলের মতো আরো আগ্রহী কৃষকদের মাধ্যমে যদি উপজেলায় জিরার মতো অন্যান্য দামী ফসল চাষের রেওয়াজ চালু করা সম্ভব হয় তাহলে আমদানী নির্ভরতা যেমন কমবে তেমনি ভাবে দেশের মানুষরা সহজেই কম দামে এই পণ্যগুলো হাতের নাগালে পাবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা হক বলেন আমরা পরীক্ষামূলক জিরা চাষে সফল হয়েছি। কৃষক জহুরুলের মাধ্যমে পুরো দেশের কৃষকদের কাছে একটি বার্তা পৌছে দেওয়া সম্ভব হলো যে খুব সহজেই আমাদের মাটিতে জিরার মতো দামী মসলা জাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব।
এই জিরা চাষের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে সরিষার মতো করে জিরা চাষ করে ফলন পাওয়া সম্ভব। এছাড়া জিরা চাষে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম ও সেচের প্রয়োজন হয় না বলে খরচও অনেক কম। নওগাঁয় জিরা চাষের এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে বলে আমি মনে করি। তাই জিরাসহ অন্যান্য নতুন দামী ফসল চাষে আগ্রহীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
মন্তব্য ( ০)