• সমগ্র বাংলা

মা‌নিকগ‌ঞ্জে শহীদ রফিকের স্মৃতিস্মারক জানান দিচ্ছে বায়ান্নর উত্তাল দিনগুলোর কথা

  • সমগ্র বাংলা
  • ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১৫:১২:০২

ছবিঃ সিএনআই

মা‌নিকগঞ্জ প্রতিনিধি: ৫২র ভাষা আন্দোলনে প্রথম শহীদ মানিকগঞ্জের মানুষের গর্বের ধন রফিক উদ্দিন আহম্মদ। ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদকও পেয়েছেন এই সূর্য সন্তান। জেলার সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে ভাষা শহীদ রফিকের জন্ম। পারিল গ্রামটি পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় রফিক নগর হিসেবে। ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে সুসজ্জিত আলমারিগুলোতে সাজানো বই। জাদুঘরের এক পাশে রাখা হয়েছে ভাষাশহীদের ব্যবহৃত পোশাক ও আসবাব। এসব স্মৃতিস্মারক জানান দিয়ে যাচ্ছে বায়ান্নর উত্তাল দিনগুলোর কথা।

ভাষাশহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৫ বছর আগে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের রফিকনগরে তাঁর নামানুসারে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি মাস এলেই সরগরম হয়ে ওঠে জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি। বছরের বাকি সময় থাকে অযত্ন আর অবহেলায়। ভাষাশহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন পাঁচজন আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, রফিক উদ্দিন আহমদ, আবদুস সালাম ও শফিউর রহমান। ২০০০ সালে তাঁদের রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বরকত ও জব্বারের সঙ্গে নিহত হন রফিক।

তিনি ছিলেন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে। মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ ও স্মৃতি জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে রফিক উদ্দিনের নিজ গ্রাম রফিকনগরে (পারিল) ৩২ শতক জমির ওপর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়। শহীদ রফিকের প্রতিবেশী কর্নেল (অব.) মজিবুল ইসলাম খান জমিটি দি‌য়ে‌ছে। একই বছরের ১৫ মে এটি উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ভবনের সামনের দিকে দেয়ালে শহীদ রফিকের একটি ম্যুরাল ও ভেতরে দুটি ছবিই যেন জাদুঘরের নিদর্শন। জাদুঘরে কয়েকটি আলমারিতে রয়েছে বিভিন্ন বই।

জাদুঘর থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ গজ দূরেই শহীদ রফিকের পৈতৃক ভিটা। ২০০০ সালে প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ওই বাড়িতে পাঠাগার ও বাসগৃহ নির্মাণ করে দেয়। সেখানে বসবাস করে শহীদ রফিকের ভাই মৃত আবদুল খালেকের পরিবার। বাড়িটির পাশে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ১৫ বছর পর গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ পরিবার রফিকের ব্যবহৃত লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, চারটি চেয়ার, একটি টেবিল ও একটি টেবিল ক্লথ জাদুঘরে দেয়। ২০০০ সালে পাওয়া রফিকের একুশে পদকের সম্মাননা স্মারকও রয়েছে।

একুশে ফেব্রুয়ারিতে রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখতে দূর দূরন্ত এলাকার মানুষজন ছুটে আসছে শহীদ রফিক গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে। শহীদ রফিক গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের ভিড়। তারা প্রথমবারের মতো জাদুঘরে শহীদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখতে পেয়ে আনন্দিত। তবে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন ভাষা শহীদদের উপর লেখা পর্যাপ্ত বই না থাকায়। অথচ গ্রন্থাগারে ১৬ হাজার বইয়ের ভাণ্ডার রয়েছে। গ্রন্থাগারের ও জাদুঘর দেখভালের দায়িত্বে আছেন ভাষাশহীদ রফিকের ভাতিজা মো. শাহজালাল বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এলাকাবাসী এবং দর্শনার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি খোলা থাকে।

এলাকার ছাত্রছাত্রীরা ভাষাশহীদের ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, চেয়ার-টেবিল দেখতে আসে। দূর থেকে দর্শনার্থীরাও এখানে আসেন। শহীদ রফিক গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন খান বলেন, দীর্ঘদিন প্রত্যাশার পর শহীদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতিগুলো গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে আনার কারণে দর্শনার্থীদের মনের খোরাক মিটেছে। এখানে প্রায় ১৬ হাজার বই রয়েছে। তবে এখানে যেসব দর্শনার্থী আসছেন তাদের বেশির ভাগ চাহিদাই থাকছে ভাষা শহীদদের উপর লেখা বইয়ের প্রতি। ভাষা শহীদদের উপর অল্পসংখ্যক বই থাকায় পাঠকের চাহিদা মেটাতে পারছি না। গ্রন্থাগারে ৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা দেওয়া হতো।

তবে পত্রিকার এজেন্ট মারা যাওয়ার পর প্রায় ২ বছর ধরে সেখানে কোনো পত্রিকা দেওয়া হয় না। গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি দেখভালকারী শাহজালাল এবং তাঁর নিজের চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। এ ছাড়া তাঁদের বেতনও অপ্রতুল।অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষাশহীদ রফিকের জন্মভিটার পাশে পাঁচ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভাষাশহীদ রফিক মুক্তমঞ্চে চলছে শিশুশিক্ষার্থীদের গান, কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা, নৃত্যসহ নানা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। মঞ্চের পাশে বসেছে গ্রামীণ মেলাও। আজ পর্যন্ত চলবে এসব অনুষ্ঠান ও মেলা।

অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ভাষাশহীদ রফিকের ভাতিজা আবদুর রউফ বলেন, এসব অনুষ্ঠান ও শিশুশিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এসব অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে তাঁদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

ভাষা শহীদ রফিকের ছোট ভাই খোরশেদ আলম বলেন, দেরিতে হলেও শহীদ রফিকের ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, তার হাতের কারুকাজ করা টেবিল ক্লথ, দু’টি চেয়ার ও একটি টেবিল জাদুঘরে দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছি। শহীদ রফিক জাদুঘর ও পাঠাগার কর্তৃপক্ষ অনেকদিন ধরেই আমাদের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। নানা কারণেই শহীদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতি চিহ্নগুলো দেয়া হয়নি। 

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন জানান, শহীদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্নগুলো জাদুঘরে দেয়ার জন্য শহীদ রফিকের পরিবারের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই অনুরোধ করেছিলাম। অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পর হলেও শহীদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্নগুলো জাদুঘরে পেয়ে দর্শনার্থীদের চাহিদা মেটাতে পেরেছি। এ জন্য শহীদ রফিকের পরিবারকে আমরা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo