• সমগ্র বাংলা

ফসলি জমিতে পুকুর বানানোর হিড়িক ! প্রশাসন নির্বিকার

  • সমগ্র বাংলা
  • ১৬ জানুয়ারী, ২০২৪ ১৪:১৪:৫৬

ছবিঃ সিএনআই

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের শরীফপুর গ্রামে ফসলি জমি কেটে পুকুর বানানোর হিড়িক পড়েছে। চারদিকে সমানতালে পুকুর কাটার এই দৃশ্য দেখে অল্প সময়ের জন্য মনে হচ্ছে এখন যেন পুকুর কাটার উৎসব চলছে ওই এলাকায়।

অথচ সরকারি আইন অমান্য করে ফসলি জমি কেটে পুকুর তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন বাধা পাচ্ছেন না জমি বা পুকুর মালিকরা বরং তারা নির্বিঘ্নে এটি করতে পারছেন।

তবে জমিকে পুকুর বানানো মালিকদের কেউ কেউ আমাদের প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, শরীফপুর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা যিনি পেশায় সাংবাদিক ও কয়েক রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে প্রশাসন ম্যানেজ করে তারা পুকুর কাটা শুরু করেছেন। যদিও এসব বিষয়ের কিছুই জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আশুগঞ্জের এসিল্যান্ড কাজী তাহমিনা সারমিন। তিনি বলেছেন, পুকুর কাটার বিষয়টি তিনি অবগত নন, অচিরেই এসবের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।

গত ১৪ জানুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শরীফপুর গ্রামের প্রবেশ মুখেই তিনটি পুকুর কাটা হয়েছে। এর মধ্যে এম কে দুলাল ডিগ্রি কলেজের বরাবর দক্ষিণে একটি, আবার এই পুকুরটি থেকে দক্ষিণ—পশ্চিম দিকে আরেকটি, কলেজের পূর্ব—দক্ষিণ কোনে একটি। এই তিনটির মালিকই একজন, তিনি শরীফপুর গ্রামের মৃত মন্নাফ মিয়ার ছেলে আউয়াল মিয়া।

এছাড়াও কলেজের সরাসরি পূর্বদিকে একটি, শরীফপুর গ্রামের টঙ্গীপাড়ায় লালপুর টু সদর সড়কের দক্ষিণ অংশে আরেকটি। টুঙ্গিপাড়া এলাকার পুকুর খননকারী মালিকের নাম হলো আব্দুস সামাদ ও এম কে দুলাল ডিগ্রি কলেজের পূর্ব দিকের পুকুর খননকারী মালিকের নাম মহিউদ্দিন মোহন, তিনি শরীফপুর গ্রামের জালু মিয়ার ছেলে। দিনে রাতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে দ্রুত মাটি কেটে দুই দিনেই একটি বড় ফসলি জমিকে পুকুর বানিয়ে ফেলছে তারা। এসব কাজে সহায়তা করছেন পার্শ্ববর্তী বায়েক গ্রামের শাহিন বকশি। ফসলি জমি কেটে পুকুর বানানোর ক্ষেত্রে তিনি তার ভেকু দিয়ে সহায়তা করছেন। তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলেন নি।

গত ১০ বছরে শুধু মাত্র এই এলাকায় পুকুর বানানোর ফলে ফসলি জমি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে, যা বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা দেখলেই বুঝা যায়। কিন্তু এত পুকুর তৈরি হওয়া স্বত্বেও প্রশাসন কখনোই এসবের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ব্যবস্থা নেয়নি। ফসলি জমি কেটে পুকুর বানানোর বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুকুর মালিক আউয়াল মিয়া দাম্ভিকতার সাথে বলেন, প্রশাসন থেকে কাগজপত্র নিয়েই আমি পুকুর কাটা শুরু করেছি, আপনি যা করার করেন। কিন্তু আউয়াল তার কথার পক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি।

এদিকে টুঙ্গিপাড়ার আব্দুস সামাদ ও তার লোকজন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রশাসন ম্যানেজ করেই পুকুর কাটছি, সমস্যা থাকার তো কথা নয়।

আইন কি বলে?
কৃষিজমি সুরক্ষা আইন—২০১৬ (খসড়া)–এর ৪(১) ধারায় বলা আছে, “কৃষিজমি কোনোভাবেই তার ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না”।এই আইন লঙ্ঘন বা অমান্য করলে তার শাস্তি হিসেবে ধারা ৭ এর (১) এ বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেই হোক না কেন, তিনি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ কিংবা তাঁহার/তাঁহাদের সহায়তা প্রদানকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ সর্বোচ্চ ০৩(তিন) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বনিম্ন ০৩ (তিন) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং বর্ণিত কৃষি জমি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা হইবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo