• সমগ্র বাংলা

কেরানিহাট মাছ বাজারে দুর্ভোগ সীমাহীন

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১৭:২৩:২৩

ছবিঃ সিএনআই

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাট মাছ বাজারে কাদা পানির মাঝে প্রতি বাজারে কোটি টাকার মাছের ব্যবসা হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামে অন্যতম কেরানিহাট মাছ বাজার, এখানে লাগেনি তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ময়লা পানিতে ভরে থাকে পুরো বাজার। আর সেখানেই পানি মাড়িয়ে চলছে মাছের কেনাবেচা।

বাজারে  ঢুকে মাছ কিনে পরিষ্কার পোশাক ও জুতা নিয়ে বের হওয়ার যেন উপায় নেই। মাছ ব্যবসায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ বিক্রির নেই কোনো ঘর। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে মাছ বিক্রি করতে হয়।

বাজারে ভিতরে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই, তাই মাছ পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, ভ্যান, রিকশা ও অটোরিকশার জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

এখানে প্রতিদিন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, বাঁশখালি সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে কার্প, দেশি প্রজাতিসহ সামুদ্রিক মাছ আসে।

এই বাজারে থেকে সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের জন্য পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা মাছ কিনে নিয়ে যান।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে মাছের বেচাকেনা। এই বাজারে রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাশ, কার্ফু, পাঙাশ, সরপুঁটি, তেলাপিয়া, বোয়াল, সিলভার কার্প, চিতল, মাগুর, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ এবং চাপিলাসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ উঠছে। সাপ্তাহে প্রতি বুধবার ও রবিবার  অর্ধকোটি টাকার মাছের ব্যবসা হলেও এখানে উন্নয়নের কোনো বালাই নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেরানিহাট মাছ বাজার টি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূবে পাশে কেঁওচিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। বরফ গলা ও মাছ রাখা পানিতে চারদিক কাদায় পরিপূর্ণ। কোনো রকম কাদা মাড়িয়ে ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় কাদা পানিতে একাকার বাজার। ব্যবসার জন্য আসা ক্রেতাদের বেশিরভাগ লুঙ্গি তুলেছেন হাঁটুর ওপরে।মাছ কিনতে আসা ক্রেতাদেরও হাঁটুর ওপরে প্যান্ট গুটিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, কেরানিহাট বাজার থেকে বছরে কোটি টাকা ইজারা বাবদ আয় হলেও কেউ কোনও খোঁজ-খবর রাখছে না। বাজারেই এমন দৈন্যদশা বিরাজ করলেও যেন দেখার কেউ নেই। নেই কেরানিহাট বাজারে ময়লা রাখা ডাসবিনের কোনও ব্যবস্থা।

পুরাতন ড্রেনেজগুলো অকেজো হওয়ায় কাদা আর নোঙরা পানির পাশাপাশি প্লাষ্টিকের ছোট-বড় ব্যাগ দিয়ে ড্রেন ভর্তি হয়ে গেছে। এসব ময়লাযুক্ত জায়গায় বসবাস করছে মাছি আর জীবাণুযুক্ত পোকা-মাকড়।

এসব মাছি ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রবে বাজারে যাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের। এরপরেও বাধ্য হয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা ও জনসাধারণ দিনের পর দিন তাদের নিত্যদিনের কেনাকাটা করছেন। পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। 

ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার প্রতি বছর এই বাজার থেকে কোটি টাকা ইজারা বাবদ রাজস্ব আদায় করলেও পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনগুলো সংস্কার না করার ফলে কাদা-ময়লা ও আবর্জনায় বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গন্ধে বাজারে হাটা-চলা করা বড়ই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

মাছ বিক্রেতা বাদশা মিয়া বলেন, পুরুষ মানুষ ভিড় ও কাদা পানি মাড়িয়ে আসতে পারলেও মহিলারা মাছ কিনতে আসতে পারেন না। মাছ হিমায়িত করে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পার্শ্ববর্তী একটি ঘর ভাড়া করে মাছ সংরক্ষণ করতে হয়। আমি জীবন-জীবিকার তাগিতে বছরের পর বছর পঁচা দুর্গন্ধের মধ্যেই বসে মাছ বিক্রি করে আসছি। ইজারাদারতো শুধু তাদের ইজারা তোলেন। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বাজারের ড্রেন গুলো পরিস্কার না করায় কাদা জমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। আমরা বাধ্য হয়ে পঁচা দুর্গন্ধ সহ্য করেই আছি। তারা কেরানিহাট বাজারের মাছ পট্টীর পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনগুলো সংস্কার করার দাবি জানান।

কেরানীহাট প্রগতিশীল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ অর্থ সম্পাদক জাবেদ বলেন, প্রতিবছর সরকার এই বাজার থেকে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেন। কিন্তু সে পরিমান আমাদের কেরানিহাট কাঁচাবাজার ও মাছ বাজার উন্নয়ন হয়নি, তিনি আরো বলেন, রবিবার এবং বুধবার মাছ বাজারে ডোকা যায় না কাদার জন্য, কাপড় নষ্ট হয়ে যায় বাজারে গেলে। গতবছর ও আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে ড্রেনগুলো পরিস্কার করেছিলাম, তবে সরকারি ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

এই বিষয়ে কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির লিঃ এর সভাপতি মোঃ ওসমান বলেন, এই হাট-বাজার থেকে কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় হলেও এখানে অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন  হয়নি। হাজারো সমস্যার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা-বিক্রেতারা কেনাকাটা করে আসছে।

এ ছাড়া নেই পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। তিনি আরো বলেন, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাদের কে বলেছিল সংস্কার করবেন, তবে কখন করা হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলেনি। 

কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওসমান আলী বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে কেরানীহাট কাঁচা বাজার ও মাছ বাজারে উন্নয়নের জন্য টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে নতুন করে কাজ শুরু করব।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo