• উদ্যোক্তা খবর

সাফল্যের প্রতিক হতে পারে প্রতিমা রাণী

  • উদ্যোক্তা খবর
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২২ ১৫:৩৭:৪৭

ছবিঃ সিএনআই

মোহাম্মদ জাহিদ, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখাঁন ইউনিয়নের হাসার পাড় গ্রামে বাস করেন প্রতিমা রানী। তার একমাত্র ছেলে এবং মা-কে নিয়ে তার পরিবার। তার স্বামী মলিন চন্দ্র ছিলেন একজন দিন মজুর। ৮ম শ্রেণীতে লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে প্রতিমা রানী রায় এর সঙ্গে মলিন চন্দ্রের বিবাহ হয়। তার লেখাপড়ায় মনোযোগ থাকায় স্বামী মলিন চন্দ্র প্রতিমা রানীকে এসএসসি পাশ করান। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, প্রায় ৯মাস চিকিৎসা করার পর ২০১৬ ইং সালে ব্রেন টিউমার হয়ে প্রতিমা রানী রায় এর স্বামী মলিন চন্দ্র মারা যান। স্বামীর ১০শতাংশ জমি ছিল যা তিস্তা নদীতে বিলিন হয়েছে। তাদের স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা।

স্বামীর মৃত্যু পর প্রতিমা রানী দিশেহারা হয়ে পড়েন। তার মা বিধবা। প্রতিমা রানী রায় অল্প বয়সে বিধবা হলে তার অবস্থা দেখে তার মা তার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। মা অন্যের বাড়ি থেকে দিন মজুরের কাজ করে যা পায় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলতো তাদের জীবন। কখনো অসুখ বিসুখ হলে মানুষের কাছে ধারদেনা করে ঔষধ কিনতে হতো। আশেপাশের লোকজন,আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হলে মনে করতো এই বুঝি টাকা চাইবে,তাই সকলে এড়িয়ে চলতো। কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে কেউ কখনো ডাকতো না। কোন কথা বললে কেউ দাম দিতো না। 

তার স্বামী ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এ সদস্য ছিল। মারা যাওয়ার প্রায় ১ বছর পর ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে প্রতিমা রানী ১লাখ ১৩হাজার টাকা পেয়ে ৩০হাজার টাকা ঋন পরিশোধ করেন তিনি। অবশিষ্ট ৮৭হাজার টাকা এবং নিজস্ব সঞ্চয়ের কিছু টাকা সহ ৯০হাজার টাকা দিয়ে ২০ শতক আবাদী জমি বন্দক নেন। আবাদ করে ১৫ মণ ধান পান। আবাদের পাশাপাশি প্রতিমা রানী চিন্তা গরু পালন শুরু করেন। তাই ধান বিক্রি করে ১৫হাজার টাকা দিয়ে একটি বকনা বাছুর কিনে পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার ৩টি গরু আছে যার আনুমানিক মূল্য ১লাখ ৪০হাজার টাকা।   

২০২১সালে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিমা রানীকে তাদের প্রকল্পের উপকার ভোগী হিসেবে নির্বাচন করে। প্রতিমা রানী তাদের হাসার পাড় নারী উদ্যোক্তা দলের ক্যাশিয়ার ও প্রগতি মহিলা সমবায় সমিতির নির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। তিনি নিয়মিত নারী উদ্যোক্তা দলের সাপ্তাহিক সভায় উপস্থিত হন এবং নিয়মিত সঞ্চয় করেন।বিভিন্ন সচেতনতা-মূলক আলোচনার পাশাপাশি শাক সবজি চাষাবাদসহ গরু-ছাগল,হাঁস-মুরগী পালন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানেন এবং তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন। তিনি ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ থেকে উদোক্তা উন্নয়ন ও ছাগল পালনের উপর প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। এ সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ৫হাজার টাকা দিয়ে ২টি ছাগল কিনে পালন শুরু করেন। নারী উদ্যোক্তা দল থেকে আরও ৮হাজার কর্জে আল হাসানা গ্রহন করে বর্তমানে তার ৬টি ছাগল আছে এবং ২টি ছাগল ও ধান বিক্রির করে ৫০হাজার টাকা দিয়ে আরও ১০ শতক জমি বন্দক নিয়ে ফসল আবাদ করছেন। গরুর গোবর ও বাড়ীর ময়লা-আবর্জনা দিয়ে সার তৈরী করে তা বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করেছেন।এছাড়াও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে গরুর দুধ বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয়ও করছেন। বর্তমানে তার পরিবারে অভাব কেটে গিয়ে স্বচ্ছলতা ফিরেছে।

প্রতিমা রাণী বলেন,পরিবারের টেকসই উন্নয়ন করতে হলে পুঁজি গঠনের কোন বিকল্প নাই। আমি আমার সম্পদ দিয়ে আমার ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে আমার স্বামীর স্বপ্ন পূরন করবো। প্রতিমা রানী নাজিম খাঁন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট হইতে যোগাযোগ করে বিধবা ভাতা তালিকা ভুক্ত হয়েছেন এবং বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। প্রতিমা রাণী তৈয়ব খাঁন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার এই উদ্যোগে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ছে। এখন অনেক নারী এখন তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিজেরা বাড়ীতে হাঁস,মুরগী,গরু,ছাগল, সবজি চাষ করছেন। 

নাজিমখান ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়েটি অনেক কষ্ট করেছেন। বন্দকী জমিতে ফসল ফলানোর জন্য সে নিজে ধান রোপন করেন এবং ধান কেটে এনে মাড়াই করেও তাকে সংসার চালাতে দেখেছি। এখন আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছেন।

প্রতিমা রানীর একমাত্র ছেলে তীর্থ রায় বর্তমান তৈয়ব খাঁন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ছে। ছেলের সর্বোচ্চ লেখাপড়া অর্জনের জন্য সে চেষ্ঠা চালিয়ে যাবে এবং স্বামীর স্বপ্ন পূরন করবে এই তার প্রত্যাশা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo