• বিশেষ প্রতিবেদন

চাটমোহরে হঠাৎ করেই বেড়েছে পানি, নীরব ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি-জমি

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১২ জুন, ২০২২ ১৭:৩৯:০৮

ছবিঃ সিএনআই

তোফাজ্জল হোসেন বাবু,পাবনাঃ নদ-নদীতে হঠাৎ করেই বেড়েছে পানি। ইতিমধ্যে পাবনার চাটমোহর উপজেলার চলনবিল অংশে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন সোনালী ধান। সীমাহীন দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন তারা। ঠিক সেই মুহুর্তে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা, হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া ও বিলচলন ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুমানী নদীর নীরব ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত মানুষের বসতভিটা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠসহ অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানও বিলীন হচ্ছে গুমানী নদী গর্ভে।

বছরের পর বছর ভাঙন অব্যাহত থাকায় বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই অন্যত্র গিয়ে নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভিটেমাটি হারিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন অভাবী মানুষেরা।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে খুব ধীরগতিতে প্রতি বছর ৫ থেকে ৭ ফিট করে ভাঙতে ভাঙতে একসময় জমি অথবা বসতবাড়ির সবটুকু চলে যায় নদী গর্ভে। বর্ষাকালে ধীর গতিতে ভাঙন হওয়ায় তা চোখে পরে না কারো। এ এলাকার নদী ভাঙন রোধে ছাইকোলা পয়েন্টে আনুমানিক ৫০০ মিটার নদী পাড় ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করলেও ভাঙন কবলিত বাঁকি প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

করকোলা গ্রামের সাগর মাহমুদ জানান, বওশা ব্রীজ থেকে ভাটির দিকে প্রায় ৫শ’ মিটার এলাকা ভাঙন কবলিত। রাস্তা ভেঙে বিলীন হচ্ছে গুমানী নদী গর্ভে। ইতিমধ্যে করকোলা কবরস্থান এবং ঈদগাহ মাঠও নদীতে বিলীন হয়েছে। গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে জায়গা কিনে নতুন কবরস্থান তৈরী করেছেন।

ছাইকোলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হাসিনুর রহমান বলেন, ছাইকোলা পয়েন্টে কিছু এলাকা ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করা হলেও, অন্য কোথাও সংরক্ষণে পদক্ষেপ না নেওয়ায় দীর্ঘদিনে গুমানীপাড়ের শত সহস্র মানুষের বসত বাড়ি চলে গেছে নদীর পেটে।

বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়িয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোকতার হোসেন বলেন, নটাবাড়িয়া গ্রামের নদী সংলগ্ন প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিরব ভাঙন চলে আসছে। গত পঁচিশ বছরে নটাবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। কিছু আবাদী জমিও গ্রাস করেছে গুমানী নদী।

বিন্যাবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও চরসেন গ্রামের রাকিব হোসেন বলেন, এ গ্রামের প্রায় ৫শ’ মিটার এলাকা ভাঙন কবলিত। গত বিশ বছরে ভাঙন কবলিত অংশের প্রায় ৫০ পরিবার অন্যত্র বাড়ি ঘর নির্মাণ করেছেন।

বিন্যাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বাড়ি ঘর গুমানী নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ধানকুনিয়া হাট, ধানকুনিয়া কবরস্থানসহ অনেক মানুষের বসতভিটা কালক্রমে গুমানী নদী গর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

বরদানগর গ্রামের রতন হোসেন জানান, বরদানগর বাজার ও ঈদমাঠ ক্রমশই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। এ গ্রামের প্রায় শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়া গৌড়নগর, লাঙ্গলমোড়া, চরনবীন, কুকরাগাড়ী গ্রামসহ নদীপাড়ের বেশ কিছু গ্রামের মানুষের বসতবাড়ি ও আবাদী জমি নদীতে ভেঙে গেছে।

চাটমোহর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক ফিরোজা পারভীন বলেন, চাটমোহর অংশে গুমানীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। এই ১২ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও এপার, আবার কোথাও অন্যপাড় ভাঙছে। কোন কোন অংশে নদী পাড়ে চর জাগছে। রাস্তা, বাড়ির, ধর্মীয় ও

সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জায়গা নদীতে বিলীন হওয়ায় এ এলাকার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন। ভাঙন কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে ভাঙন রোধ করা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সৈকত ইসলাম জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে চেষ্টা করবো।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo