• বিশেষ প্রতিবেদন

এবার কোরবানিতে আশানুরূপ দাম ও ক্রেতা সংকটে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হলেন খামারিরা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২৬ জুলাই, ২০২১ ১৪:৪২:০৮

ছবিঃ সিএনআই

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ এবারের ঈদে আশানুরূপ দাম ও ক্রেতা না পেয়ে হাটে বিক্রি করতে নিয়ে আসা হাজার হাজার গরু বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন খামারি এবং ব্যবসায়ীরা । এতে চরম ভোগান্তি এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এরা লাভের আশায় গরু বিক্রির জন্য আরিচা গরু হাট, বাথুলির গরুর হাট ও ঢাকার গাবতলীসহ আশাপাশের বিভিন্ন হাটে নিয়েছিলেন । কিন্তু প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা তাদের এসব গরু বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন। ঈদের দিন এবং
পরের দিন উত্তরাঞ্চলের জেলা পাবনা-সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার খামারি ও ব্যবসায়ীরা তাদের অবিক্রিত গরু বোঝাই শত শত ট্রাক ফেরত নিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরিতে পার হয়েছে। ঈদের দিন সকালে আরিচা ঘাটে ফেরত গরু বোঝাই ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে বহু খামারি ও ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে বেশী লাভের আশায় গিয়েছিলেন ঢাকার গাবতলীসহ আশপাশের কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বসা বিভিন্ন পশুর হাটে। কিন্তু সে আশাই গুড়ে বালি।করোনাভাইরাসের কারণে টাকার অভাবে অনেকেই এবার কোরবানি দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। যে কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম অনেক কম । ফলে উত্তরাঞ্চল থেকে হাটে নেওয়া এসব গরুর অর্ধেকেও বিক্রি করতে পারেননি তারা। শুধু উত্তরাঞ্চলেরই হাজার হাজার গরু অবিক্রিত রয়েছে। খামারি ও ব্যাবসায়ীদেরকে শত শত ট্রাকে গরু ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

হাটে ক্রেতা ও দাম কম থাকায় আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই গরু বিক্রি করতে পারেননি। ক্রেতাদের চাহিদা থাকলেও লকডাউনের কারণে টাকার সংকটের কারণে তারা গরু ‍কিনতে পারেননি। অন্যান্য বছর ঢাকার সবচেয়ে বড় গরুর হাট গাবতলীতে ঈদের দিন এবং পরের দিনও গরু বিক্রি হতো। কিন্তু এবার সেরকম বিক্রি হয়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কথা হয় গরু ব্যবসায়ী মজনু মিয়ার সাথে। তিনি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর থেকে ১৬টি গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে গিয়েছিলেন। ঈদের একদিন আগ পর্যন্ত গরু বিক্রি করেছেন ১০টি । এরপর বাজার পড়ে যাওয়ায় আর বিক্রি করতে পারেননি। বিধায় বাধ্য হয়ে বাকী ৬টি গরু বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসলেন। যে ১০টি বিক্রি করেছেন তাতে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা

লোকসান হবে তার। এ পরিস্থিতিতে এবার পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ করা হবে না বলে তিনি জানান। গরু ব্যবসায়ী পাবনার খোকন মিয়া ১৫টি গরু নিয়ে ঢাকার বাড্ডায়
কোরবানির হাটে যান। টাকা বের করার জন্য সেখানে লোকসানে ৬টি গরু বিক্রি করেন। দাম একেবারেই কম হওয়াতে বাধ্য হয়ে বাকী ৯টি গরু ফেতর
নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন তিনি। করোনার কারণে মানুষের কাছে টাকার অভাব বিধায় হাটে ক্রেতা কম। যে সব ক্রেতারা এসেছেন তারা ২লাখ টাকা মূল্যের গরু ৬০/৭০হাজার টাকা থেকে শুরু করেন। এক লাখ টাকাও বলেন না। বাধ্য হয়ে গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। লোকসানতো হচ্ছেই আর কত লোকসান দিব।

গরুর ব্যাপারী পাবনার হাসান শেখ বলেন, তিনি পাবনা থেকে ২৪টি গরু নিয়ে ঢাকার মুহাম্মদপুর কোরবানির পশুর হাটে যান। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার হাটে ক্রেতা অনেক কম হওয়াতে গরুর দামও কমে যায়। যে কারেণে এক লাখ টাকার গরু দাম করে ৫০হাজার টাকা। বিধায় ২৪টির মধ্যে ১১টি গরু বিক্রি করেন বাকী ১৩টি গরু ফেরত নিয়ে বাড়ি ফিরেন। এবার ব্যবসায় অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি আমরা।

পাবনার রমজান সরদার বলেন, তিনি ১৮বছর ধরে গরুর ব্যবসা করেন। এবারের মতো গরুর বাজার দেখেননি কখনো। লকডাউনের কারণে এবার হাটে বেচাকেনা খুবই কম। ১৭টি গরুর মধ্যে ৫টি গরু বিক্রি করেন। আশানুরূপ দাম না পাওয়াতে বাকী ১২টি গরু ফেরত নিয়ে বাড়ি যেতে বাধ্য হন তিনি। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা খামারী আক্কাস আলী বলেন, করোনা মহামারীর কারণে এবার অনেক মানুষ কোরবানি দেননি। কঠোর বিধিনিষেধের কারণে অনেক মানুষ আগেই বাড়ি চলে গেছেন। এসব কারণে এবার গরুর হাটে ক্রেতা কম
এবং কম দামে গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বেশী দামে বিক্রির জন্য ২টি গরু নিয়ে গাবতলির হাটে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভাল দাম না পাওয়াতে গরু ফেরত নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। এসব গরু বাড়ি নিয়ে আবার লালন পালন করতে হবে এবং মাংস হিেেসবে বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় নাই। এতে একদিকে ভোগান্তি অপরদিকে অর্থনৈতিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা।

এভাবে আরিচা ঘাটে পার হতে আসা কথা হয় একাধিক খামারি ও ব্যবসায়ীদের সাথে। তারা বলেন, এবার গরুতে লাভ হয়নি, ক্ষতি হয়েছে। হাটে ক্রেতা সংকট এবং দাম কম হওয়ায় খুব বেশি গরু বিক্রি হয়নি। লকডাউনের কারণে ক্রেতাদের চাহিদা থাকলেও পকেটে টাকার অভাবে তারাও গরু কিনতে পারেননি। বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের  ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দিন বেশীর ভাগই ফিরতি গরু বোঝাই ট্রাক পার করা হয়েছে। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo