রংপুর ব্যুরো : রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতিতে প্রতিদিন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদক সেবনকারী, কারবারি,পরিবহনকারী কিংবা সহযোগী-কাউকেই কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
রবিবার (২৮ডিসেম্বর) দুপুরে,মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগ কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় প্রতিদিন নিয়মিতভাবে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মাদকের সঙ্গে জড়িত যে-ই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আরও নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অভিযান জোরদার করা হবে।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় নিয়মিতভাবে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে।অভিযান চলাকালে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৬০০ কেজি গাঁজা, সাড়ে চার হাজার বোতল ফেনসিডিল, প্রায় ৫০০ গ্রাম হেরোইন এবং সাড়ে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। এসব মাদক দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পথে রংপুর বিভাগে প্রবেশ করে স্থানীয় বাজারে ছড়িয়ে পড়ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত সাড়ে ১১ মাসে রংপুর বিভাগে প্রায় ১০ হাজার মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে বিভিন্ন জেলা থেকে ৩ হাজার ১৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান,রংপুর বিভাগের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদক চোরাচালানের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় জেলার সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে মাদক প্রবেশের চেষ্টা চালানো হয়। এসব এলাকা চিহ্নিত করে বিশেষ নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “মাদক শুধু একটি সামাজিক ব্যাধি নয়, এটি অপরাধ, সহিংসতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের মূল কারণ। একটি পরিবারকে ধ্বংস করার পাশাপাশি পুরো সমাজকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয় মাদক। তাই মাদক নির্মূলে শুধু আইন প্রয়োগই নয়, সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, অভিযানের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তরুণ সমাজকে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে লিফলেট বিতরণ, আলোচনা সভা ও পথসভাও আয়োজন করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে জনগণের সহযোগিতা আগের চেয়ে বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে, যার ফলে অভিযান আরও কার্যকর হচ্ছে।
রংপুর মহানগরীর নরুল ইসলাম বলেন,“আগে আমাদের এলাকায় সন্ধ্যার পর মাদক সেবনকারীদের আনাগোনা ছিল। এখন নিয়মিত অভিযান হওয়ায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা চাই এই অভিযান যেন অব্যাহত থাকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি বাড়ানো হবে।পাশাপাশি মাদক মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন,“মাদকমুক্ত রংপুর বিভাগ গড়তে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ কাজে সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।”
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগ কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মাসুদ হোসেন জানান,গত সাড়ে ১১ মাসে বিভাগজুড়ে মোট ৯ হাজার ৯১০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে ৩ হাজার ২৭টি মামলা হয়েছে এবং ৩ হাজার ১৫২ জন মাদকসংশ্লিষ্ট আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন,রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় প্রতিদিন নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মাদক সেবনকারী, কারবারি, পরিবহনকারী কিংবা সহযোগী,কাউকেই কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
মন্তব্য (০)