নিউজ ডেস্ক : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তফ্রন্টের আদলে বামপন্থিদের নতুন একটি জোট গঠন হতে যাচ্ছে। দেশের প্রধান প্রধান বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক জোট ও দলের সমন্বয়ে ‘কনভেনশনে’র মাধ্যমে চলতি নভেম্বরেই এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
বামপন্থিদের বৃহত্তর এ জোটটি জুলাই জাতীয় সনদের অনুরূপ ‘জনতার সনদ’ নিয়ে মাঠে নামবে। ‘একসঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচন’– এ লক্ষ্য নিয়ে গণতন্ত্র ও জনজীবনের সংকট মোকাবিলার নানামুখী কর্মসূচি ঘোষণার কথাও রয়েছে তাদের। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে ৩০০ আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতিও চলছে। জোটের সম্ভাব্য শরিক দলগুলো এরই মধ্যে নিজ নিজ দলের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি ও জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে বামপন্থিদের এই জোট গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ছয়টি বাম দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ বৃহত্তর এ জোট গঠনের মূল উদ্যোক্তা। বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত দলগুলো হচ্ছে– বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও বাসদ (মার্কসবাদী)।
উদ্যোক্তারা জানান, গত ৮-৯ মাসের আলোচনার পর এই জোটে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপ এবং জাতীয় গণফ্রন্টসহ আরও কয়েকটি বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল। ধারাবাহিক যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বামপন্থিদের আরেক জোট ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার শরিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ জোটভুক্ত চারটি দল হচ্ছে– বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, বাসদ (মাহবুব), গণমুক্তি ইউনিয়ন। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাধিক সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণসংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনও নতুন জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
বামপন্থি কয়েকজন নেতা জানান, আগামী ১৫ নভেম্বর রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘কনভেনশনে’র মাধ্যমে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। তবে ওই দিন অন্য একটি সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ ডাকায় কনভেনশন স্থগিত করা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে কনভেনশন করে অথবা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জোটের আত্মপ্রবশের ঘোষণা দেওয়া হবে।
তবে নতুন জোটের নাম এখনও ঠিক হয়নি। ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ কিংবা ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নামে জোটের যাত্রা শুরু করা যায় কিনা, এমন প্রস্তাব দিয়েছেন কোনো কোনো দলের নেতা। কেউ কেউ বলছেন, ১৯৫৪ সালে যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠিত হয়েছিল, তার সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে জোটের নাম কী হবে, কিংবা কোন কাঠামোয় তা চলবে, সেটা সবার মতামত নিয়েই ঠিক করা উচিত। এ কারণে কনভেনশনেই নাম ও ‘জনতার সনদ’ চূড়ান্ত করার বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আন্দোলনের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে একসঙ্গে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে নতুন জোটটি। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য শরিক দলগুলো নিজ নিজ প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে। জোট গঠনের পর সবগুলো দলের প্রার্থী তালিকা একত্রিত ও বাছাই করে সমঝোতার ভিত্তিতে জোটগত প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত ও ঘোষণার কথা রয়েছে। তবে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও সমমনা পেশাজীবী সংগঠনসহ শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের প্রার্থী করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাম প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নব্য ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকাতে এ প্রয়োজনীয়তা আরও প্রাসঙ্গিক। এ বিবেচনা থেকেই বৃহত্তর ঐক্য প্রশ্নে একমত হয়েছেন তারা।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, শাসক শ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতে বিকল্প একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করতে যাচ্ছেন তারা। জোটের ব্যানারে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টাও রয়েছে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে দক্ষিণপন্থি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থানের সম্ভাবনা ঠেকাতে বাম প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিগগুলোকে নিয়ে একত্র হচ্ছেন তারা। একসঙ্গে নির্বাচন ছাড়াও ‘জনতার সনদ’ নিয়ে জনজীবনের বিভিন্ন সংকট নিরসনের দাবিতে তারা মাঠে থাকবেন।
মন্তব্য (০)