
নিউজ ডেস্ক : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসকে লক্ষ্য ধরে ইতোমধ্যেই অধিকাংশ দল শুরু করেছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তবে এবারের নির্বাচনী মাঠে বিশেষ নজর কাড়ছে ইসলামি দলগুলোর সক্রিয় ভূমিকা। প্রচারণা, প্রার্থী বাছাই ও সম্ভাব্য জোটের হিসাব-নিকাশে তাদেরকে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সরব হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই বিপ্লবে ইসলামপন্থিদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণের প্রভাব এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। আগামী নির্বাচনে এর প্রতিফলন জাতি প্রত্যক্ষ করবে বলে তাদের ধারণা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। দলটি প্রায় ১৫০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। প্রার্থী তালিকায় অভিজ্ঞ ও শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি রয়েছেন একঝাঁক তরুণ আলেম; যারা ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।
সূত্র মতে, এবারের নির্বাচনে জমিয়তের প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্র জমিয়তের সাবেক প্রায় একডজন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে আসা অভিজ্ঞ নেতারাও প্রার্থী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
প্রার্থীদের মধ্যে আলেমদের পাশাপাশি আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিও রয়েছেন। নেতৃত্বের এই বৈচিত্র্যকে সামনে রেখে জমিয়ত আশাবাদী- আসন্ন নির্বাচনে তারা একটি শক্তিশালী অবস্থান জানান দিতে সক্ষম হবেন।
জানা গেছে, জমিয়তের অভ্যন্তরে একক নির্বাচনের আলোচনা যেমন আছে তেমনি বিএনপির সঙ্গে জোটের গুঞ্জনও রয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতা, জোট বা যুগপৎ ইত্যাদি কোনো কিছুতেই রাজি নয় দলের হাইকমান্ড।
এ বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী যুগান্তরকে বলেন, ইসলামের বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মতপার্থক্য বিদ্যমান। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ কুরআন-সুন্নাহর নীতি ও আদর্শে উজ্জীবিত, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা পূর্বসূরি হক্কানি আলেমদের সঠিক মতাদর্শে পরিচালিত একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। শুধু জামায়াতে ইসলামীই নয়, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের জোট করার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিএনপি বা সমমনা অন্য কোনো দলের সঙ্গে ভোটের জোট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো বিএনপি বা অন্য কারো সঙ্গে জোটগত নির্বাচনের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে দল হয়তো এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে আমাদের দল আগের তুলনায় অনেক বেশি গোছানো ও শক্তিশালী। আমরা এখন এককভাবে নির্বাচন করলেও ইনশাআল্লাহ ভোটের মাঠে বেশ কিছু আসনে ভালো একটা অবস্থান তৈরি করতে পারব বলে আশাবাদী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে একই আসনে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ইতোমধ্যে নীলফামারী-১ (ডোমার -ডিমলা) আসন থেকে নির্বাচনের জন্য কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন ।
দলের প্রচার সম্পাদক মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা ও সিলেটসহ বিভিন্ন বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে একান্তভাবে সাক্ষাৎ করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর প্রতি আসনে একজন করে মোট ১৫০ জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন তারা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জমিয়তের প্রার্থী তালিকায় সভাপতি ও মহাসচিব ছাড়াও হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- খতিবে বাঙাল মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ), মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ), অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, সিলেট-৪ (জৈন্তা, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ), মাওলানা হাম্মাদ আহমদ গাজীনগরী, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ), মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ জামী, কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর), মাওলানা তফাজ্জুল হক আজিজ, সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ), ড. মাওলানা শোয়াইব আহমদ, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা), মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, ঢাকা- ১৮ (উত্তরা), মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, নরসিংদী-২ (সদর), মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, নরসিংদী-৫ (রায়পুরা), মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, ফরিদপুর-১, মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ (সদর-বিজয়নগর), মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, গাজীপুর- ৫ (কালীগঞ্জ), মাওলানা মাসরুর আহমদ, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার), মাওলানা হেকিম নুরুজ্জামান আসাদী, হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট), মুফতি নাছির উদ্দিন খান, গাজীপুর-২ (মহানগর, টঙ্গী ও পূবাইল), মাওলানা এখলাসুর রহমান রিয়াদ, হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং ও আজমেরীগঞ্জ) প্রমুখ।
মন্তব্য (০)