
নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ভ্যাটিকান। গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকায় ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন এস র্যান্ডেল বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, হলি সি আপনাদের পাশে রয়েছে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া কামনা করে।’
তিনি ঢাকায় ভ্যাটিকান দূতাবাসে পোপ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের জন্য ডিকাস্ট্রির প্রধান কার্ডিনাল জর্জ জ্যাকব কুভকাডও উপস্থিত ছিলেন।
কার্ডিনাল ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তার সফরে একাধিক আন্তঃধর্মীয় সংলাপ পরিচালনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় মসজিদ পরিদর্শন, ইসলামি পণ্ডিতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, হিন্দু মন্দির এবং ঢাকার একটি প্যাগোডা পরিদর্শন।
আর্চবিশপ র্যান্ডেল জোর দিয়ে বলেন, হলি সি কোনো রাজনৈতিক দল, সরকার ব্যবস্থা বা ব্যক্তিকে সমর্থন করে না এবং কোনো নির্দিষ্ট নির্বাচনি ফলাফলও কামনা করে না।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক, প্রায় পাঁচ লাখ খ্রিস্টান, ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট, অন্যান্য সব নাগরিকের মতোই তাদের বিবেক অনুযায়ী ভোট দেবেন।’
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রসঙ্গে ভ্যাটিকান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই ধরনের সংলাপ আশা জাগায় এবং চরমপন্থা, ঘৃণা এবং যুদ্ধে ভরা পৃথিবীতে শান্তি, সংহতি, নিরাময় এবং ন্যায়বিচারের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সেতুবন্ধন তৈরি করার, ভালো শমরীয় হতে, অন্যদের প্রয়োজনে তাদের কাছে পৌঁছানোর সাহস থাকতে হবে। আমাদের এমন সমাজ দরকার নেই যেখানে ভয় ও ঘৃণা ভরা। কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরই এই মূল্যবোধগুলোকে প্রচার করা উচিত নয় এবং সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা উচিত নয়।’
ভ্যাটিকান দূত রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের পর ২০১৭ সালে পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরের কথাও স্মরণ করেন, যখন তিনি শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন এবং বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এই বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা একটি বাসস্থান এবং মর্যাদার অধিকারী’, তিনি সংঘাতের শিকারদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশংসা করে বলেন, ‘তাদের আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’
রাষ্ট্রদূত জানান, পোপ লিও চতুর্দশও সমানভাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বৃদ্ধির প্রার্থনা করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সিআর আবরার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্যাটিকানের সম্পর্ক শান্তি, সহানুভূতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘এই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এবং মানবিক মর্যাদা উন্নয়নের প্রতি অভিন্ন প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘চলুন, আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই শান্তির সেতুবন্ধন তৈরি করতে, ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা এবং বিশ্বাস, জাতি বা পটভূমি নির্বিশেষে কেউ যাতে পিছিয়ে না পড়ে- তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করি। আমাদের সাধারণ মানবতা যাতে সমস্ত ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে আসে- তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা যেন হাতে হাত মিলিয়ে কাজ চালিয়ে যাই।’
মন্তব্য (০)