
নিউজ ডেস্ক : রাজনৈতিক দলের নেতাদের তেলবাজি না করে পুলিশকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আপনারা কোনো রাজনৈতিক দলের বিশেষ সুবিধা নেবেন না। নিজেকে রাজনৈতিক দলের কর্মী ভাববেন না। মনে রাখবেন-পেশিশক্তি কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে রোববার আয়োজিত নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশের সব কাজ জনস্বার্থে ও আইন দ্বারা পরিচালিত হবে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আপনারা রাজনৈতিক দল থেকে দূরে থাকবেন। আমি বারবার বলছি, এখন যদি তেল দেওয়া শুরু করে দেন, তাহলে আপনাদের তেল কিন্তু নির্বাচনের পর শেষ হয়ে যাবে। অতএব, এখন যার কাছে যে তেল আছে রিজার্ভ করে রাখবেন। পরে কিন্তু তেলটা কাজে লাগাতে পারবেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে না। এখানে অনেক স্টেকহোল্ডার রয়েছে। এর মধ্যে জনগণ ও বড় রাজনৈতিক দল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী-সবার সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর নির্বাচন সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে কাজ এটা আমরা পুরোদমে করে যাব। এরই মধ্যে আমরা মাস্টার ট্রেনারদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে-সেটা যেন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয়। এর জন্য সবার সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার, এই ব্যাপারে আপনাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন মাথা থেকে মুছে ফেলবেন। আরেকটি অনুরোধ, সমাজ থেকে দুর্নীতি এবং মাদক কমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনারা যদি সহযোগিতা করেন এটা আমরা কমাতে পারব। যদিও আমাদের সময় খুব একটা নেই, আমরা সেকেন্ড স্টেজে, আমরা এখন ইলেকশন মডিউলে চলে গেছি। তারপরও নির্বাচনের সঙ্গে এই জিনিসটা আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। পুলিশের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ নিছক কোনো প্রশিক্ষণ নয়-উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে গণতন্ত্রের ভিত্তি ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তা রক্ষার জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী, সুশৃঙ্খল, পেশাদার, প্রশিক্ষিত, সুসজ্জিত দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনী খুবই প্রয়োজন।
রাজবাড়ীর ঘটনা আমরা তদন্ত করে দেখছি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজবাড়ীর ঘটনা আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে হয়তো আমরা সম্পূর্ণ ঘটনা জানতে পারব। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত গত কয়েক দিনে কিছুটা খারাপের দিকে গেছে। এটাকে আমরা সম্পূর্ণ আগের জায়গায় যেন নিয়ে আসতে পারি সে চেষ্টা করব।
দুর্গাপূজায় অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন দুর্গাপূজায় অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট। তিনি বলেন, সামনে দুর্গাপূজা ঘিরে সারা দেশের এই অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা বন্ধে গত বছরের ন্যায় এ বছরও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গতবার কিন্তু আপনাদের সহযোগিতায় দুর্গাপূজা খুব ভালোভাবে হয়েছে। এজন্য আপনারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
নির্বাচনে নিরাপত্তা ঐতিহাসিক পরীক্ষা : রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইজিপি বাহারুল আলম। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের জন্য ঐতিহাসিক পরীক্ষা। কারণ নির্বাচন শুধু ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া নয়-এটা জনগণের বিশ্বাসেরও প্রতিফলন।
বাহারুল আলম বলেন, জাতীয় নির্বাচন শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়-এটা আমাদের গণতন্ত্রের শেকড়কে আরও মহিমান্বিত করার এক সুযোগ। আমাদের প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্য নির্বাচনের সময় মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রত্যেকের কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মনিটরিং করা হবে। সুতরাং প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকে দক্ষ ও সুশৃঙ্খল হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, এটা শুধু আইনকানুন শেখানো নয়, এই প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে আমরা জানব কীভাবে চাপের মধ্যেও নিরপেক্ষ থাকা যায়। কীভাবে সংঘাতের পরিবর্তে সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়। কীভাবে মানুষের আস্থা অর্জন ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা যায়। তিনি আরও বলেন, আমরা যদি আমাদের সততা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে এই দায়িত্ব পালন করি তবে পুলিশের ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রমাণের সুযোগ এসেছে, বাংলাদেশ পুলিশ একটি আধুনিক, গণতন্ত্রবান্ধব এবং কার্যকর বাহিনী।
মন্তব্য (০)