
নিউজ ডেস্ক : গ্যাস খাতে বছরে সিস্টেমলস প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। এতে বছরে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ঘনিমটার গ্যাস অপচয় হয়; যার আর্থিক মূল্য তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা, যা গ্যাস খাতে সরকারের বার্ষিক গড় ভর্তুকির প্রায় অর্ধেক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পেট্রোবাংলা গ্যাস খাতে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পেয়েছে আট হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর পেট্রোসেন্টারে ‘দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রতিবন্ধকতা, মোকাবিলা ও মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে গ্যাস খাতের সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, গ্যাস অনুসন্ধান, আর্থিক চিত্র নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। এসব প্রতিবেদনে সিস্টেমলস এবং ভর্তুকির বিষয়টি উঠে আসে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন।
পেট্রোবাংলার উত্থাপিত আর্থিক প্রতিবেদনের হিসাব থেকে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত বছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্যাস খাতে সিস্টেমলস (সঞ্চালন ও বিতরণ পর্যায়ে) ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সিস্টেমলসে গ্যাসের পরিমাণ ১৪৫ কোটি ঘনমিটার; গড় মূল্য হিসাবে এ ক্ষতির আর্থিক মূল্য তিন হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের পুরো হিসাব ধরলে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে পেট্রোবাংলার বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেমলস ছিল তিন হাজার ৭৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ বছর সিস্টেমলসে গ্যাস অপচয় ও চুরির পরিমাণ ছিল ২৩৬ কোটি ঘনমিটার।
দেশের গ্যাস সরবরাহ সংকট কমাতে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে সরকার। স্থানীয় গ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে এই গ্যাস গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রিতে যে অর্থের ঘাটতি থাকছে, তাতে ভর্তুকি দিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করছে পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলার হিসাব থেকে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পেট্রোবাংলা সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি হিসেবে পেয়েছে আট হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তবে গত রমজান, সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের লোডশেডিং কমাতে অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির কারণে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা বেশি ভর্তুকি দিয়েছে সরকার।
বিপুল পরিমাণ সিস্টেমলস নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান বলেন, ‘গ্যাসের সিস্টেমলস পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা হচ্ছে। আশার কথা হলো, সিস্টেমলস এখন সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছে। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে। বর্তমানে ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।’
মূল প্রবন্ধে ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘বিতরণ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সঞ্চালন প্রতিষ্ঠানের ২ শতাংশ সিস্টেমলস হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। বিষয়টি পেট্রোবাংলাকে আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি দেশের সামগ্রিক গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘দেশে গ্যাসের রিজার্ভ আট টিসিএফে (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট) নেমে এসেছে। আগামীতে গ্যাস খাতে বিকল্প উৎস তৈরি না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
মন্তব্য (০)