
নওগাঁ প্রতিনিধি: বহু বছর পর জেলার প্রধান প্রশাসনিক অফিস নওগাঁর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে হরেক রঙে রঙ্গিন করার কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জেলায় যোগদানের পর থেকে জেলার ১১টি উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকান্ড থেকে সকল ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
বিশেষ করে অনিয়ম আর হয়রানীর জালে আবদ্ধ ইউনিয়ন ভ’মি অফিসগুলো থেকে হয়রানী ও ঘুষ ছাড়াই সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এনেছে তা সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে। এমনই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বছরের পর বছর ময়লা আর আবর্জনায় ভরে থাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চারপাশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে আধুনিকায়নের মাধ্যমে হরেক রঙে বর্ণিল করার মাধ্যমে দর্শনীয় করে তোলার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। এযেন মৃত একটি পরিবেশকে রঙের ছোঁয়ায় জীবিত করার এক অনন্য প্রয়াস।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, বছরের পর বছর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটকের সামনের স্থানটি বালুময় হয়ে ময়লা আর আবর্জনায় ভড়ে থাকতো। এরপর দক্ষিণের দুই পাশের জায়গাও একই হালে পড়ে থাকতো। পড়ে থাকা অন্য জায়গাটি বিআরটি অফিস অপরিকল্পিকত যানবাহন চেক করার গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করতো। এতে করে জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ের সৌন্দর্য বলে কিছুই ছিলো না। বিগত সময়ের জেলা প্রশাসকগন বিভিন্ন সময়ে পড়ে থাকা জায়গার কিছু অংশ একটি প্রাচীর দিয়ে রক্ষা করেছেন। এরপরও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা সকল শ্রেণিপেশার মানুষরা গাড়ি রাখার অঘোষিত গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলো। এমন অবস্থায় জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়কে একটি অগোছালো, অসুন্দর, এলোমেলো ও হযবরল বলে মনে হতো।
বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জেলায় যোগদানের পর থেকে বহুমাত্রিক সমস্যাকে সঙ্গে নিয়ে জেলাজুড়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোকে ছিমছাম করে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে বিনির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে মনকাড়া স্থাপত্য স্থাপন করে গাছগুলোসহ আঙ্গিনাগুলো বর্ণিল রঙে রঙ্গিন করা হচ্ছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটকের সামনের জায়গাকে প্রাচীরের মাধ্যমে ঘিরে একটি আকর্ষনীয় স্থাপত্য স্থাপন করে গাছগুলোকে রঙ্গিন করার কাজ সহজেই আগন্তুকদের দৃষ্টি কাড়ছে সহজেই। এতে করে রঙ্গিন রঙের ছোঁয়ায় পুরো জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গন যেন দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের রিফ্রেশ কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। এমন সুন্দর পরিবেশের অবতারনা করার অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহণ করায় জেলা প্রশাসককে সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সেবা নিতে সেবাগ্রহিতারা।
জেলার রাণীনগর উপজেলা থেকে সেবা নিতে আসা একজন সেবাগ্রহিতা মো: রমজান আলী অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন ময়লা আর আবর্জনার মধ্যে থাকা বড় বড় গাছের নিচের অংশগুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নানা রঙে যে রঙ্গিন করা হচ্ছে তা সত্যিই প্রতিটি মানুষের মন কাড়ছে। পুরো কার্যালয়ের মৃত পরিবেশকে হরেক রঙ্গের ছোঁয়ায় যেভাবে বর্ণিল করা হচ্ছে তাতে করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহিতাদের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এই সেবাগ্রহিতা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন একটি সুন্দর পরিবেশ একটি মানুষকে ভালো কাজ করার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। একটি ছিমছাম ও গোছানো পরিবেশ একটি মানুষকে বেশি বেশি কাজ করার উৎসাহ যোগায়। একটি পরিবেশের সুন্দর পরিবর্তন অনেক অসুন্দর মানুষকে সুন্দর করে তোলে। কারণ প্রতিটি মানুষই সুন্দরের পূজারী। এছাড়া দীর্ঘসময় কাজ করে একজন ক্লান্ত ব্যক্তি তার বাহিরের চারপাশের মনকাড়া সুন্দর একটি পরিবেশের সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটালে পুনরায় কাজ করার শক্তির যোগান পাওয়ার সঙ্গে পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। সুন্দর একটি পরিবেশ দেখে আগন্তুকদের মন ফুরফুরে হয়ে ওঠে। এতে করে ওই সুন্দর পরিবেশের কারণে ওই স্থানে থাকা মানুষগুলো সম্পর্কেও ওই আগন্তুকদের ধারণার পজেটিভ স্কেল অনেক উচু হয়।
তিনি আরো বলেন জেলার একজন প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা তার সহকর্মীদের নিয়ে বাহিরের অসুন্দর, নোংরা ও এলোমেলো পরিবেশের মধ্যে থেকে প্রতিনিয়ত কাজের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে সেবা দিবেন এটা হতে পারে না। কর্মকর্তার অফিস কক্ষ থাকবে নানা সাজে সজ্জ্বিত হয়ে আর বাহিরের পরিবেশ থাকবে অগোছালো এটা একজন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার চিন্তা হতে পারে না। এমনই চিন্তা-চেতনা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চারপাশকে পরিচ্ছন্ন করে সুন্দর অংকন ও ডিজাইনের মাধ্যমে সজ্জিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা। সজ্জিতকরণের কাজ শেষ হলে দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহিতারা তাদের কিছুটা সময় সুন্দর ও আকর্ষনীয় একটি নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশে অতিবাহিত করতে পারবেন। আগামীতে কার্যালয়ের পুরো প্রাঙ্গনজুড়ে এই ধরণের কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে বলেও জানান জেলার এই প্রধান কর্মকর্তা।
মন্তব্য (০)