
অনলাইন ডেস্কঃ ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে তলানিতে এসে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, পদক্ষেপ আর হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা দুদেশের মধ্যে। কাশ্মীর সীমান্ত থেকে নিয়মিতই আসছে দুদেশের সেনাদের সংঘাতের খবর। এরই মধ্যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, যেকোনো সময় ভারত সামরিক আগ্রাসন শুরু করতে পারে বলে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে তাদের কাছে। আর এমনটা সত্যিই ঘটলে পাকিস্তানও পূর্ণ শক্তি দিয়ে তার জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি।
সোমবার (৫ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শনিবার (৩ মে) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরটি-এতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খালিদ জামালি বলেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রমাণ রয়েছে যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন পরিচালনার পরিকল্পনা করছে ভারত। বেশি কিছু এমন নথিপত্র ফাঁস হয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট যে পাকিস্তানের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের মনে হয়, এটা ঘটতে চলেছে এবং এটা আসন্ন।
রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানে আক্রমণ করে বা গুরুত্বপূর্ণ জলপ্রবাহ ব্যাহত করে, তবে পাকিস্তানও পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেবে। প্রচলিত এবং পারমাণবিক; উভয় শক্তির পূর্ণ ব্যবহার করবো আমরা।
এ সময় সিন্ধু পানি চুক্তি ইস্যুতে ইসলামাবাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। খালিদ জামালি বলেন, সিন্ধু পানি চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। তাই সিন্ধুর পানি দখল করার, এর প্রবাহ বন্ধ করার বা পানির প্রবাহকে ভিন্ন দিকে সরানোর যেকোনো প্রচেষ্টা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল হবে এবং পূর্ণ শক্তির সঙ্গে এর জবাব দেওয়া হবে।
অবশ্য, উভয় দেশের কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র থাকায় সম্ভাব্য বিপদের কথা স্মরণ করিয়ে অনতিবিলম্বে উত্তেজনায় লাগাম টানার আহ্বান জানান পাকিস্তানি এ রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায় উত্তেজনা কমিয়ে আনা আরও বেশি প্রয়োজন।
সাক্ষাৎকারে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান খালিদ জামালি। তিনি বলেন, আমি মনে করি, কাশ্মীর হামলার নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা আশা করি চীন এবং রাশিয়ার মতো শক্তিগুলো সেই তদন্তে অংশগ্রহণ করতে পারে।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। সীমান্তে যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় নিজের তিন বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তানের দিক থেকেও চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান।
এরইমধ্যে বেশ কয়েক দফায় কাশ্মীরের সীমান্ত রেখায় (এলওসি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে মহড়া তো চলছেই, ইসলামাবাদকে সতর্কবার্তা দিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গত শনিবার পাকিস্তানও ‘আবদালি’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। ৪৫০ কিমি রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘সিন্ধু মহড়ার’ অংশ হিসেবে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
এছাড়া যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রোববার (৪ মে) রাতে ভারতীয় সেনাদের একটি ব্ল্যাকআউট মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেনানিবাস এলাকায়।
নাগরিকদের আগে থেকেই এই ব্ল্যাকআউট মহড়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হলেও মহড়ার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো এলাকায়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধগুলোর সাক্ষী হয়েছিলেন যারা, তাদের অনেকের মধ্যেই বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। যুদ্ধের গন্ধ পেতে শুরু করেছেন অনেকেই। যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির রূপরেখা দেখতে পাচ্ছেন তারা এ মহড়ায়।
মন্তব্য (০)