শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে মাদকসেবন করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা রাস্তায় উল্লাস করে নারীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা।
বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের মসজিদ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওষুধ ব্যবসায়ী মো. হাসিবুল ইসলাম (বাদশা) (৪০) শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের মো. আব্দুল হাই এর ছেলে। তিনি মসজিদ মোড় এলাকায় মা মনি নামক একটি ফামের্সী পরিচালনা করতেন।
নিহতের শালিকা সালমা আক্তার বলেন, রাতে আমাদের বাসায় খাওয়া দাওয়া শেষে ঢাকা থেকে রাত ১২ টার একটু আগ মুহুর্তে রওনা হই। রাত ২টা ২০ মিনিটের সময় আমার দুলাভাই নিহত হাসিবুল ইসলাম, আমার বোন বোনজামাই ও আমাদের সন্তানসহ ৯ জন সদস্য একটি প্রাইভেট গাড়িতে করে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় আমাদের বাসার সামনে পৌঁছায়।এ সময় বাড়ির সামনে পৌঁছামাত্রই ৮ থেকে ১০ জনের একটি কিশোর গ্যাং দল মাদকসেবন করে রাস্তায় চিল্লাচিল্লি করছিলো। এসময় আমরা গাড়ি থেকে ব্যাগগুলো নামাচ্ছিলাম। ওঁরা আমাদের গাড়ির সামনে এসে আমাদেরকে খারাপ ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। এরপর আমার দুলাভাই ওদেরকে বলতে থাকে ভাগিনা এরা আমার মেহমান তোমরা চলে যাও। এরপর ওঁরা উত্তেজিত হয়ে দুলাভাইকে বলতে থাকে তোকে কি চিনবো। এরপর ওঁরা আমাদের গায়ে হাত দেয়। এরপর আমাদের গাড়ি চালক শিমুল এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে। পরবর্তীতে দুলাভাই এগিয়ে গিয়ে আমাদের দুই বোনকে উদ্ধার করতে গেলে ওঁরা দুলাভাইকে মারধর করতে থাকে। তবুও দুলাভাই আমাদের দুজনকে উদ্ধার করে বাসার ভেতর নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ওঁরা বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুলাভাইকে ইট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে সঙ্গে সঙ্গে দুলাভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এসময় ওঁরা আমাদের চুলের মুঠো ধরে মারধর করে লাঞ্ছিত করে বাসা থেকে চলে যায়। তাদের মধ্যে দুলাভাই একজনের নাম রুবেল বলে জানিয়েছেন। অনেকবার দুলাভাই বলছে ভাগিনা রুবেল চলে যাও। তবুও ওরা পিছু হাঁটেনি। এরপর দুলাভাইকে উদ্ধার করে প্রথমে মাওনা চৌরাস্তা এলাকার স্থানীয় আলহেরা হাসপাতাল ও পরবর্তীতে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
প্রাইভেটগাড়ি চালক শিমুল হোসেন বলেন, হাসিবুল ইসলামের বাসার সামনে গাড়ি দাঁড় করানোর পরপরই ওঁরা অস্বাভাবিক আচার-আচরণ করতে করতে গাড়ির সামনে আসে। আমরা মনে করছি ওরা রাস্তা দিয়ে সামনে চলে যাবে। কিন্তু না ওঁরা গাড়ির সামনে এসে দুজন মহিলা দেখে উল্লাস শুরু করে। এর পরপরই নারীদের গায়ে হাত দেয়া শুরু করে। আমি গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার পরপরই আমাকে মারধর শুরু করে। ওরা সংখ্যায় অনেকজন তাই তাদের সঙ্গে পারা সহজ ছিলো না। তাছাড়া সবাই মাদকাসক্ত ছিলো। হাসিবুল ভাই এত করে অনুরোধ করলো তবুও ওরা থামেনি। বাসার গেইট ভেঙে শেষ পর্যন্ত খুন করে বিদায় নিলো। কতটা ভয়ঙ্কর আমিও খুবই ভয়ে ছিলাম। ওরা আমার দিকেও কয়েকবার ইট নিয়ে তেড়ে আসে।
নিহত ওষুধ ব্যবসায়ীর স্ত্রী মোছা: মাহমুদা আক্তার মালেকা বলেন, ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বাসার সামনে গাড়ি থামার কিছুক্ষণ পর কিশোর গ্যাংয়ের দল আমাদের গাড়ির সামনে আসে। আমার স্বামী বার বার বলছিলেন তোমরা আমাকে চিননা। রুবেল নামের একজনকে ভাগিনা বলে অনেকবার অনুরোধ করছে। ওদের শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়, তবুও ওরা থামেনি। শেষ পর্যন্ত ওরা আমার স্বামীর জীবন নিয়ে গেছে। আমার স্বামী ওদের নির্যাতনের কারণে প্রস্রাব করে দেয়। মাদকাসক্তরা কতটা হিংস্র আমার বাসার গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আমার স্বামীকে খুন করে। আমি ওদের কঠিন বিচার চাই। ওঁরা আমার বোন আমাকেও লাঞ্ছিত করেছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার প্রনয় ভূষণ দাস বলেন, রাত সোয়া ৩টার দিকে মৃত অবস্থায় হাসিবুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে আসে তার স্বজনরা।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে পুলিশ। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন,নিহত হাসিবুল ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি বেড়ানো শেষে রাতে মাওনা বাসায় ফেরার পরপরই হামলার শিকার হয়। বাড়িতে প্রবেশ করে ওষুধ ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছে । মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত দু'জনকে আটক করা হয়েছে। পলাতক রুবেলসহ বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। এবিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য (০)