মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর দীর্ঘকাল ধরেই পিঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রি হয় হরিরামপুর উপজেলার হালি পিঁয়াজ ও কন্দ পিঁয়াজ (শাখা পিঁয়াজ)। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কয়েক হাজার কৃষক বিভিন্ন জাতের হালি পিঁয়াজ চাষ শুরু করেছে। তবে পিঁয়াজের হালির দাম বেশি হওয়ায় এবং দিন কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ নিয়ে হিশশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে ফলন ভাল হলেও পিঁয়াজের দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে চাষীরা।
চাষীদের শঙ্কার মাঝেও হরিরামপুরে বাড়ছে পেঁয়াজের চাষ। এ বছর হরিরামপুরে পেঁয়াজের চাষ বেড়েছে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ জমিতে। চাষ বাড়ায় লোকসানের শঙ্কা মাথায় নিয়েই দিনরাত একাকার করে পেঁয়াজের চারা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা, চলতি অর্থবছরে এ উপজেলায় প্রায় ২৮৩০ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এবার মাঠের হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ক্ষেতে কৃষকেরা দলবেঁধে সকাল থেকে সন্ধ্যা পিঁয়াজের চারা রোপণ করছে। একজন লোহার ছোট লাঙ্গল দিয়ে সারি টানছে। আর অন্যরা সারিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছে। অনেকে আবার পিঁয়াজ লাগানো শেষে ক্ষেতের আদ্রতা বাড়াতে পানি দিচ্ছে।
পিঁয়াজ চাষীদের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে এ উপজেলার কৃষকেরা ফরিদপুর থেকে ৫ হাজার টাকা করে সুপার কিং পিয়াজের দানা এনে রোপন করে। যা বর্তমানে ১৬ হাজার টাকা দরেও কৃষকদের কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়াও অনেক কৃষক ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা মন পিঁয়াজের হালি কিনেও পিঁয়াজ চাষ করছে। তবে এক বিঘা জমিতে ৪ থেকে ৫ মন হালি লাগে। এতে করে এক বিঘা জমিতে পিঁয়াজ চাষে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ হচ্ছে। আবাদ ভাল হলে প্রতি বিঘায় সুপার কিং ৫০ থেকে ৭০ মন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। প্রতিমণ পিঁয়াজ আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে না পারলে কৃষকদের মোটা অংকের টাকা লোকসান হতে পারে ধারণা করছে কৃষকরা।
উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর চরপাড়া গ্রামের মো. সেলিম জানায়, বাজারে চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় অতীতের তুলনায় অধিক জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছি। কিন্তু এ বছর পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি খরচ বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। জমিচাষ, বীজ, চারা রোপণ, পরিচর্যা ও সার কীটনাশকসহ প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬৫ মণ ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ গোড়াইল এলাকার ইব্রাহিম জানায়, আমি তিন বিঘা জমিতে হালি পিঁয়াজের চাষ করব। ইতোমধ্যে দুই বিঘা লাগানো হয়েছে। সবমিলিয়ে তিন বিঘা জমিতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকার ওপরে খরচ হবে। এতে করে দাম ভাল না পেলে, সব কৃষকেরই লোকসান হবে। আশা করছি, ফলন ভাল হলে আর দামের বাজার যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে কৃষকেরা লাভবান হবে।
উপজেলার গালা ইউনিয়নের সাখিনি গ্রামের কৃষক ফজলু মোল্লা বলেন, ভরা মৌসুমে কৃষকরা লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষাবাদে হতাশ হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অসময়ে ভাল দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজের আবাদ বাড়ছে। অসময়ে ভাল দামে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, হরিরামপুর উপজেলায় ঐতিহ্যগতভাবে অনেক আগে থেকেই হালি পিঁয়াজের চাষে কৃষকদের সুখ্যাতি রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ উপজেলায় প্রায় ২৮৩০ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এবার মাঠের হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার ছাড়িয়ে প্রায় ৪০০০ হেক্টরের অধিক জমিতে পেঁয়াজ চাষ হবে বলে আশা করছি। এ উপজেলার কৃষকদের সবসময় কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আশা করি এবছর উপজেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব হবে। গতবছর পেঁয়াজের চড়া দাম থাকায় এ বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে কৃষকরা।
মন্তব্য (০)