
নিউজ ডেস্ক : জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে শেষ মুহূর্তে বড় মতপার্থক্যের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ১৭ অক্টোবর শুক্রবার পূর্বঘোষিত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আদৌ হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার ইতালি সফর শেষে বুধবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
পরে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আজ সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিতব্য ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেলের বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়। চূড়ান্ত জুলাই সনদে বাস্তবায়ন পদ্ধতি দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়নি। সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ না দেখে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনসহ আরও পাঁচটি ইসলামপন্থি দলও স্বাক্ষর করবে না বলে সূত্রে জানা গেছে। সনদে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) থাকা বিষয়গুলো উল্লেখ থাকায় স্বাক্ষর করবে না বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মাকর্সবাদী। অন্যদিকে স্বাক্ষর না করার বিষয়ে ভাবছে গণফোরামও। এদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক দলও স্বাক্ষর না করার পক্ষে বলে জানা গেছে।
জুলাই জাতীয় সনদের বিষয়ে জামায়াত দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জানার পরেই স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। কমিশনতো চূড়ান্ত সনদের সঙ্গে বাস্তবায়নের সুপারিশ দেয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জানার পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তার আগে নয়।
মঙ্গলবার রাতে ঐকমত্য কমিশন যে সনদ প্রকাশ করেছে তাতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই পরিবর্তে সন্তোষ প্রকাশ করলেও হামিদুর রহমান বলেন, আগে নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে ফয়সালা করতে হবে, তারপর সনদে সই।
জুলাই সনদ পাঠানোর পর মঙ্গলবার রাতে এনসিপির নেতাদের সঙ্গে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। সেখানে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাস্তবায়ন পদ্ধতি মীমাংসা না করলে জুলাই সনদ নব্বইয়ের দশকের তিন জোটের রূপরেখার মত ব্যর্থ হবে। ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে সংস্কার প্রক্রিয়া আগানো না হলে এনসিপি সনদে সই করবে না বলে ওই বৈঠকে জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনসিপি বলছে, তারা মনে করে এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় তারা ছাড় দিয়েছে। এবার আর ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা সংস্কার- বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে নতুন করে পুরো আলোচনা শুরু করার পক্ষে। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার সমকালকে বলেন, জুলাই সনদে বাস্তবায়ন পদ্ধতি উল্লেখ নেই। কমিশনের কাছে আমরা বলেছি সেটা না থাকলে কিভাবে স্বাক্ষর করব? কি নিশ্চয়তা আছে ওই পদ্ধতিতে এটা বাস্তবায়ন হবে। স্বাক্ষরের বিষয়ে দলীয় ফোরামে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব।
সরোয়ার তুষার সমকালকে বলেন, সংলাপের সময় আলোচনা হয়েছিল সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে সনদ কার্যকর করে গণভোট হবে। তারপর আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে তা অনুমোদিত হবে। ওই অধিবেশনে সংবিধান সংস্কার ক্ষমতা থাকবে। সনদে এই বাস্তবায়ন পদ্ধতি নেই তাই এনসিপি সই করবে না।
মন্তব্য (০)