
নিউজ ডেস্কঃ অন্তর্বর্তী সরকার যদি কারও ইঙ্গিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে গড়িমসি করে, তবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন শায়েখে চরমোনাই ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর ফটকে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলের আগে এক সমাবেশে এমনই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সরকারের উদ্দেশে ফয়জুল করিম বলেন, যদি ঐকমত্য কমিশনে আপনারা সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে সহজ কথা, আপনারা গণভোট দেন। রেফারেন্ডাম দেন। যদি জনগণ পিআর সিস্টেম নির্বাচনের পক্ষে থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই দাবি করতে পারি। আর যদি জনগণ পিআর সিস্টেম নির্বাচন না চায়, তাহলে আমরা দাবি করব না।
তিনি বলেন, সরকারকে বলবো, অবশ্যই আপনারা রেফারেন্ডাম দেন, গণভোট দেন। যদি অন্য কারও ইঙ্গিতে আপনারা পিআর সিস্টেম নির্বাচন দিতে গড়িমসি করেন, তাহলে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের বাধ্য করবে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন দেওয়ার জন্য।
শায়েখে চরমোনাই বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এটা সবার দাবি, শুধু আমাদের দাবি নয়, জনগণেরও দাবি। কাজেই এটা দিতে অসুবিধা কোথায়? কাদের ইঙ্গিতে আপনারা দিচ্ছেন না? আমি মনে করি, ভারত চায় না জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে। আপনারা কি ভারতের আশা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুধু নির্বাচনের জন্য বসেনি এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কেন বসেছে আমরা সবাই জানি- সংস্কার, বিচার, নির্বাচন। আপনি সংস্কার না করে কীভাবে নির্বাচন দেন? দৃশ্যমান বিচার না করে আপনি কীভাবে নির্বাচন দেন? যদি শুধু আপনি নির্বাচনের জন্য ক্ষমতায় বসেন, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি আপনি তিনটি বিষয়কে সামনে নিয়ে ক্ষমতায় বসেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সংস্কার করতে হবে, দৃশ্যমান বিচার দেখাতে হবে, এরপর নির্বাচনে যেতে হবে। যদি এইগুলি আপনি না করেন, শুধু নির্বাচন নির্বাচন করেন, তাহলে আমি মনে করবো আপনিও কোনো এক দলের দিকে ঝুঁকে গেছেন। আপনি নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলবেন।
নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে এমন প্রশ্ন রেখে এরপর ফয়জুল করিম বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই দাবি করছে পিআর সিস্টেম নির্বাচন। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ স্পষ্ট ঘোষণা করেছে যে, পিআর সিস্টেমে নির্বাচন দিতে হবে। পিআর সিস্টেমে নির্বাচনের ফায়দা কী, উপকারিতাটা কী, এ বিষয়ে এরইমধ্যে আমার মনে হয় জনগণ জেনে-বুঝে গেছে। এমনকি বর্তমান জরিপে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ জনগণ পিআরের পক্ষে।
তিনি বলেন, পিআরের বিপক্ষে কিছু নাই, তা আমি বলবো না। যখন আমরা ওষুধ সেবন করি, সেখানে লেখা থাকে এর প্রতিক্রিয়া বা সাইড এফেক্ট কী আছে। পিআরের ব্যাপারেও দুই-একটা সাইড এফেক্ট নাই, তা আমি বলবো না। কিন্তু দেখতে হবে অধিকাংশ ভালো না মন্দ? যদি পিআরের ১ শতাংশ ভালো, আর ৯৯ শতাংশ খারাপ থাকে, তাহলে পিআরের বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়া যায়। কিন্তু যদি ২ শতাংশ খারাপ থাকে, আর পক্ষে থাকে ৯৮ শতাংশ, তাহলে পিআরের ব্যাপারে প্রশ্ন থাকে কেন?
শায়েখে চরমোনাই বলেন, কাকে ভোট দিবেন, কে নির্বাচিত হবে? এটা একটা দলের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। স্থিতিশীল সরকার হবে না? আমি তাদের প্রশ্ন করতে চাই, ধরে নেন আজকে যেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানেও যদি এককভাবে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করে, তাহলে সেই পার্লামেন্টের অবস্থাটা কী হবে? সেটা তো দুর্বল পার্লামেন্ট। যদি কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হয়, সেই পার্লামেন্ট তো দুর্বলই হয়। তাই বর্তমান পদ্ধতিতেও তো দুর্বল পার্লামেন্ট হওয়া সম্ভব।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ নেতা আরও বলেন, পিআর সিস্টেম নির্বাচনে বিএনপির আপত্তি থাকারই কথা না। কারণ তাদের একজন উঁচু পর্যায়ের নেতা বক্তব্য দিয়েছেন যে ৯০ শতাংশ ভোট তাদের। যদি ৯০ শতাংশ ভোট তাদের হয়, তাহলে তারা আসন পাবে ২৭০-এর ওপরে। তাতে এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে। সমস্যা কোথায়? বরং ঝামেলামুক্ত সরকার গঠন করতে পারবে। পিআর সিস্টেম নির্বাচনের ব্যাপারে তো বিএনপি বক্তব্য দিয়েছে। কী বলছে? তারা জাতীয় সংসদ গঠন করবে। জাতীয় সরকারটা কীভাবে হবে আমাকে বলুন? সবাই সম্মিলিতভাবে যে সরকার হয়, সেই সরকারটাই তো জাতীয় সরকার হয়, না একক সরকারকে জাতীয় সরকার বলা হয়? যেহেতু সবাই মিলে গঠিত সরকারকে জাতীয় সরকার বলা হয়, আর পিআর পদ্ধতিতেই তো সব দল, সব মত, সব আদর্শের মানুষগুলো সংসদে যাবে। কাজেই বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী তো পিআর সিস্টেম নির্বাচনের প্রয়োজন।
ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি আজহারুল করিম আবরার, যুগ্ম মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।
মন্তব্য (০)