নিউজ ডেস্ক : দেশের অন্যতম শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসির (এআইবিএল) শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, ব্যাংকের শীর্ষ পদ তথা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ এবং অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে।
এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগের জন্য গত ২ সেপ্টেম্বর এআইবিএল কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়। পদের যোগ্যতা হিসেবে অন্তত ১০ থেকে ২০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতার শর্ত দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, মোট ২৪ জন অভিজ্ঞ ব্যাংকার এই পদে আবেদন করলেও কোনো আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বা ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি। বরং ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্বে থাকা মো. রাফাত উল্লাহ খানকে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এমডি হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গোপনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
ব্যাংক পাড়ায় গুঞ্জন রয়েছে, রাফাত উল্লাহ খান ব্যাংকের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারের শ্যালক। অভিযোগ রয়েছে, পুরো প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকের আরেক ক্ষমতাধর পরিচালক এবং ইসি কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ। এতে করে মেধা ও যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ব্যাংকের শীর্ষ পদ পূরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।
সূত্রে জানা গেছে, যেকোনো ইসলামী ব্যাংকে এমডি পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর অন্তত দুই বছরের ইসলামী ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রস্তাবিত এমডি রাফাত উল্লাহ খান পূর্বে কখনোই কোনো ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেননি। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন—তিনি কীভাবে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জন করেছেন? প্রচলিত নিয়ম ও রীতি ভেঙে কী করে তাকে এমডি পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ার পূর্বে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, লিজিং কোম্পানি থেকে আসার সুবাদে তিনি লঙ্কাবাংলাসহ বিভিন্ন লিজিং প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ জনকে এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের অনেকেরই ব্যাংকিং খাতে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এসব নিয়োগে বড় ধরনের বাণিজ্য ও অনিয়মের গুঞ্জন ব্যাংকের ভেতরে তীব্র হয়েছে।
এদিকে, গত এক বছরে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা উদ্বেগজনকভাবে অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সিএএমইএলএস রেটিংয়ে এ অবস্থার স্পষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যায়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বরের তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অ্যাসেট কোয়ালিটি এবং আয়-এর রেটিং ‘৩ বা মোটামুটি ভালো’ থেকে নেমে ‘৪ বা প্রান্তিক’ হয়েছে। সামগ্রিকভাবে সিএএমইএলএস রেটিং ‘২ বা সন্তোষজনক’ থেকে এক ধাপ নেমে ‘৩ বা মোটামুটি ভালো’ পর্যায়ে নেমে এসেছে।
এছাড়া গত ৩০ জুন ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে যে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততার হার ৯.৮৩% থেকে কমে ৯.০২%-এ দাঁড়িয়েছে। এটি ব্যাংকের ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা হ্রাস এবং ভবিষ্যৎ মূলধন সংকটের আশঙ্কা তৈরি করছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, রাফাত উল্লাহ খানকে ব্যাংকটির এমডি পদে অনুমোদনের জন্য একটি বড় সিন্ডিকেট বাংলাদেশ ব্যাংকে অবিরাম তদবির চালাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই নিয়োগ হয়ে গেলে ওই সিন্ডিকেটের জয় হবে। এতে ব্যাংকে চরম অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর মো. রাফাত উল্লা খান আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও চিফ রিস্ক অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগদানের আগে তিনি এনসিসি ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি), সিআরও ও ক্যামেলকো হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মন্তব্য (০)