• বিনোদন

দেশসেবা করতেই মূলত এই প্ল্যাটফর্মে আসা: তোরসা

  • বিনোদন
  • ১২ অক্টোবর, ২০১৯ ১৬:১৪:৫৫

বিনোদন ডেস্ক: এর আগের দুইবারে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এবার কোন বিতর্ক ছাড়া অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৯’ এর আসর। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল এবারের আসর। প্রায় ৩৭ হাজারের বেশি প্রতিযোগী টপকে এবার বিজয়ীর মুকুট জিতে নিয়েছেন চট্টগ্রামের মেয়ে রাফাহ নানজীবা তোরসা। বিজয়ীর নাম ঘোষণার পর তাকে শেষে পরিয়ে দেন মিস সিঙ্গাপুর '১৮ ভেনেসা পন্সে দে লিওন এবং ক্রাউন পরিয়ে দেন গতবারের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। আগামী ১৪ ডিসেম্বর লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন তোরসা। তোরসা চট্টগ্রামের মেয়ে হলেও তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়াতে। তোরসার বাবার নাম শেখ মোর্শেদ, যিনি ছিলেন পেশায় চট্টগ্রাম কোর্টের আইনজীবী। তোরসার বাবা মারা গেছেন ২০১৪ সালে। তার মায়ের নাম শারমিন মোর্শেদ এবং একমাত্র ছোট ভাই তুরাজ। বাবার পেশার খাতিরে তোরসার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের শিল্পকলা এলাকায়। শৈশব থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিচরণ হওয়ায় তোরসা হয়ে উঠেন ভীষণ মেধাবী এবং চৌকস। একেবারে ছোট বয়স থেকেই নাচ শিখেছেন এবং পেয়েছেন সাফল্য। সুন্দরীদের মঞ্চে সাফল্যের মুকুট মাথায় পড়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তোরসা। নিজের অনুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা যারা অংশগ্রহণ করেছি তারা সবাই এটা ডিজার্ভ করে। আমার কাছে মনে হয় জাজরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা সেটা ভেবে চিন্তেই নিয়েছেন। আমি এর জন্য কৃতজ্ঞ। আমি আশা করবো সবাই আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবেন। আমি বিশ্বাস রাখি যে, পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। তিনি আরও বলেন, পজেটিভিটি হচ্ছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আমি ভীষণ পজিটিভ একজন মানুষ। আমি যদি বিজয়ী নাও হতাম তাহলেও কষ্ট লাগতো না। কারণ এখানে সেরা ১২তে যারা ছিলেন তারা সবাই এটা ডিজার্ভ করেন আমি মনে করি। এদের প্রত্যেকের মনের মধ্যে এই চিন্তাটাই ছিল যে তারাই হয়তো হবেন বিজয়ী। আমার মনেও তাই ছিল।’ ‘মিস ওয়ার্ল্ড হচ্ছে এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেটা উইমেন হুডকে সেলিব্রেট করে, অ্যা সেন্স অব লাইফ। এটা কোন ট্র্যাডিশনাল বিউটি প্রেজেন্টের আওতায় পড়ে না। আর আমি নিজেও একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার। ১১ বছর বয়স থেকেই আমি সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেছি এবং করে যাচ্ছি এখনও। এই প্রেরণা থেকেই মূলত মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে অংশগ্রহণ করা। এখানে আসার আরও কারণ হচ্ছে এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার যে উদ্দেশ্য ‘বিউটি উইথ এ পারপাজ’ এটা আমাকে বেশ আগ্রহী করেছে। আরেকটা মূল কারণ হচ্ছে 'সোশ্যাল ওয়ার্ক' করা। আমি যেহেতু বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত আছি, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমার দেশকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করতে পারব এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারব।’ যোগ করেন তোরসা। আগামীর পরিকল্পনা জানিয়ে তোরসা বলেন, অল্প বয়স থেকেই আমি 'সোশ্যাল ওয়ার্ক' করি। সেটাই চালিয়ে যেতে চাই সবসময়। আর আমি মনে করি চ্যারিটি কখনও দেখিয়ে করার বিষয় না। মোটকথা হলো আমি কাজটা করে যেতে চাই। নাটক কিংবা সিনেমায় দেখা যাবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার প্রথম ইচ্ছা হচ্ছে নিজের দেশকে সার্ভ করা। এরপর যদি কাজ করি তাহলে হয়তো শোবিজে দেখা যাবে। সেটা নাটক ও হতে পারে বা সিনেমাও। শোবিজে কাজ করার ইচ্ছা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মে আসার আগে এই চিন্তাটা মাথায় নিয়ে এখানে আসিনি। এখানে এসেছি মূলত দেশকে সার্ভ করার মন মানসিকতা নিয়ে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তোরসা নৃত্য, আবৃতি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, থিয়েটার, মডেলিং, মূকাভিনয়েও পারদর্শী। তিনি আবৃতি সংগঠন ‘নরেন’ এবং থিয়েটার সংগঠন ‘ফেইম’ এর সাথে যুক্ত। এছাড়া নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন সামাজিক সংগঠন লিও ক্লাব এবং রেডক্রিসেন্টের সদস্য হিসেবে। বিজয় টিভির শো’র সঞ্চালনাও করেছেন, পাশাপাশি রেডিওতে কাজ করেছেন। এছাড়া তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘হালদা’ ছবিতেও ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তোরসা। লেখাপড়াতেও মেধাবী তোরসা। চট্টগ্রাম ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ‘জিপিএ ফাইভ’ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন তোরসা। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আই আর) বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে তিনি জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা সপ্তাহ আয়োজনে ২০১৬ সালে প্রতিনিধিত্ব করেন। ওই বছর জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম হন তোরসা। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তোরসা বিজয়ী হয়ে পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ তিন বছরে যতগুলো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন প্রায় সবখানেই প্রথম হয়েছেন তিনি। এছাড়াও ২০০৮ সালে ‘লিটল মিস চিটাগাং’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন প্রথম স্থান অর্জন করেন। ২০০৯ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর’ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে ফোক ডান্সে প্রথম হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। সেই বছর সমগ্র চট্টগ্রাম থেকে একমাত্র বিজয়ী হন তিনি। এছাড়াও ২০১০ সালের ‘জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতা’র চ্যাম্পিয়ন এবং ভারতনাট্যমে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। একই বছরে এনটিভি’র আয়োজনে ‘মার্কস অলরাউন্ডার’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হয়েছিলেন তোরসা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo