• মুক্তমত

ক্যাডার পেতে পাগলের মতো পড়তে হয় না

  • মুক্তমত
  • ২৮ আগস্ট, ২০১৯ ১৭:৫৩:৩৯

২০০৪ সালে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কামোর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করি। ২০০৬ সালে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিই। চান্স পাই ‘উত্তরের আলোকবর্তিকা’খ্যাত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে; বিষয় কৃষি। মাস্টার্স করি উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব নিয়ে। মাস্টার্স শেষে চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকি। বেসরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েই চাকরিটা পেয়ে যাই। কিন্তু স্বপ্ন থেমে থাকেনি। বিসিএসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি, বলতে গেলে ‘একেবারে শূন্য থেকে শুরু’। বাজারে পাওয়া এমপিথ্রি সিরিজের বই দিয়ে শুরু করি প্রস্তুতি পর্ব। ইংরেজিতে কম সময়ে ভালো প্রস্তুতি নিতে English for competitive exam বইটাও বেশ কাজে দিয়েছে। পাশাপাশি এমএস জাকির হোসাইনের A Passage To Learning English বইটিও পড়েছি। গণিতের জন্য অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির বোর্ড বইগুলোতেই জোর দিয়েছি। গণিতে আদতে এগুলোর বিকল্প নেই। সেগুলো থেকে বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্ক করেছি। বাংলার জন্য সৌমিত্র শেখরের বই পড়েছি, বাদ দিইনি মোহসীনা নাজিলার ‘শিকড়’। বইগুলো বাংলা অংশের প্রস্তুতির জন্য বেশ কার্যকর। সাধারণ জ্ঞান পড়েছি আগ্রহ নিয়ে, কখনোই মনে হয়নি এটা মুখস্থের। বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ, কৌতূহল ও জানাশোনা থাকায় ব্যাচমেটদের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলাম ভ্রাম্যমাণ এনসাইক্লোপিডিয়া নামে। বিসিএস অধ্যবসায়ের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসটাও জরুরি। মনে মনে দুটি বিষয় ভেবেছি, ‘হ্যাঁ, আমি পারব’ আর ‘স্রষ্টা আমার স্বপ্ন পূরণ করবেন’। এ আত্মবিশ্বাসটা আমাকে এক রকম শক্তি জুগিয়েছিল। ৩৭তম বিসিএস কৃষি ক্যাডারে সপ্তম স্থান অধিকার করি। বিগত বিসিএসগুলোতে (৩৫, ৩৬তম) ২০০ এমসিকিউ প্রশ্নের জন্য ১০৫-১১৫ ছিল কাট মার্কস। তাই টার্গেট ছিল ১০৫-১১৫ মার্কস। শুধু যতগুলো সঠিক মনে হয়েছে ততগুলোই দাগিয়েছি। আইডিয়া করে বড়জোর ১০টি দাগিয়েছি, কারণ ১টি প্রশ্ন ভুল হলে ০.৫ নম্বর কাটা! বিসিএসে প্রিলিমিনারিটাই কঠিন। প্রিলির সিলেবাসটা এত বড় যে মনে হয় এর প্রস্তুতির শেষ বলে কিছু নেই! আমার কাছে মনে হয়েছে, লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে যতটা না পড়ার আছে, তার চেয়ে বেশি বোঝার আছে। মুখস্থ না করে যদি বুঝে বুঝে পড়া যায়, তাহলে পরীক্ষায় ভালো লেখা যায়। সহায়ক বইগুলোতে যা আছে হুবহু সেভাবে না লিখে নিজের সৃষ্টিশীল চিন্তা দিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। কারণ লিখিত পরীক্ষায় ব্যক্তির মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। নিজের মতো করে ঠিকঠাক লিখলে নম্বরও বেশি পাওয়া যায়। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ লিখিত পরীক্ষায় বেশির ভাগ প্রার্থী এই তিনটি বিষয়েই খারাপ করে। ভাইভায় কতগুলো উত্তর দিতে পারলাম তা দেখা হয় না। দেখা হয়—কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। তাই দু-একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে ভয়ের কিছু নেই। ভাইভার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ভাইভার দিন সাদা শার্ট, লাল টাই, কালো রঙের প্যান্ট, সু ও বেল্ট, কালো রঙের কোট (শীতকাল হওয়ায়) পরে গিয়েছিলাম। ভাইভা শুরু হওয়ার আগে হলরুমে স্বল্প সময়ে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যার একটু ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ভাইভা বোর্ডে একটু একটু ভয় লাগে, এটাই স্বাভাবিক, আমারও লেগেছিল। স্যার বলেছিলেন, ‘ভাইভা বোর্ডকে কেউ যেন মিথ্যা কথা বা বানিয়ে বানিয়ে বলে ম্যানিপুলেট না করি। নিজের সততা যেন ধরে রাখি।’ ভাইভা বোর্ডের স্যারদের অভিব্যক্তি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছি শুনে বোর্ডে প্রথমেই প্রশ্ন করা হয়, ‘হাজী দানেশ কে? উনি কী করেছিলেন?’ এর পর পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞেস করা হয়, এলডিসি কী? বাংলাদেশ কী অবস্থানে আছে, উন্নয়নশীল দেশের তালিকা কে প্রস্তুত করে? খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা কী? ইত্যাদি। ভাইভা বোর্ডে ৮-১০ মিনিট ছিলাম। যতটুকু পেরেছি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, ভাইভা শেষ হলে স্যারদের অনুমতি নিয়ে রুম ত্যাগ করি। বিসিএসের ফল প্রকাশের পর দেখি, কৃষি ক্যাডারে আমি সপ্তম। নতুনদের উদ্দেশে বলব, বিসিএসে ক্যাডার পেতে যেমন পাগলের মতো পড়তে হয় না, ঠিক তেমনি দু-একটি বই পড়েও পাস করা যায় না। তাই যতখানি সম্ভব বুদ্ধি খাটিয়ে পড়াশোনা করা উচিত। প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা দৈনিক পত্রিকা পড়লে সাধারণ জ্ঞানের অংশটি সহজ হয়। গণিতের বিষয়গুলো নিয়মিত চর্চা করা উচিত। ইংরেজিতে ভালো করতে হলে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা চাই। সর্বোপরি আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। অনুলিখন : জুবায়ের আহম্মেদ

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo