রংপুর ব্যুরো: আওয়ামীলীগ পন্থি অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে ৭ম দিনের মতো রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ছাত্র,ড্যাব সহ বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করছেন। এঘটনায় শিক্ষার্থীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনও করছেন।অধ্যক্ষের অপসারণ করা না হলে কলেজ ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্য বিরোধী চিকিৎসক ছাত্র ও কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার(৫নভেম্বর)সকালে কলেজ ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল এলাকায় আন্দোলন করছেন বৈষম্য বিরোধী চিকিৎসক, ছাত্র ও কর্মচারীরা।বিক্ষোভ মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মাহমুদুল হক সরকার, সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার সচিব শরিফুল ইসলাম মন্ডল,ডা.মোখলেসুর রহমান সরকার, ডা. নিখিলেন্দু গুহ রায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
রংপুর মেডিকেল কলেজের (রমেক) নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মো.মাহফুজার রহমানের অপসারণে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এরপরও অপসারণ করা না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা।
এর কর্মবিরতির ফলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। একই দাবিতে ২ নভেম্বর থেকে পঞ্চম দিনের মত শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন অব্যাহত রেখেছেন। দুই ঘন্টা চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় আউটডোর ইনডোরে শত শত মানুষের ভিড়। এঘটনায় ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পরতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।তারা বলছেন হঠাৎ করে এই দুর্ভোগ মানুষের জন্য কাম্য নয়।এরপর সকাল এগারোটার পর থেকে রোগী দেখার টিকিট দেওয়া শুরু করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ ।
সকালে ২ ঘন্টা হাসপাতাল ও কলেজে কর্মবিরতি পালনের পর আওয়ামী পন্থী অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্য বিরোধী চিকিৎসক ছাত্র ও কর্মচারীরা।প্রতিদিন ২ ঘন্টা কর্মবিবৃতি করবেন তারা।আর রোববার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষনাদেন আন্দোলনকারীরা। বক্তারা বলেন,অধ্যক্ষকে অপসারণ করা না হলে রোববার থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হবে।
৩০ অক্টোবর থেকে আন্দোলন শুরু হওয়ায় সদ্য নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ ডা.মাহফুজার রহমানকে কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।এঘটনায় অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে তালা দিয়ে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি,শহিদ আবু সাঈদের ময়না তদন্ত রিপোর্ট বিকৃতির চেষ্টাকারী, আওয়ামী পন্থী স্বাচিপ নেতা ডা. মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজে ঢুকতে দেয়া হবে না। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন,শহীদ আবু সাঈদ এর ময়না তদন্ত রিপোর্ট বিকৃতির চেষ্টাকারী, আওয়ামী পন্থী স্বাচিপ নেতা ডা. মাহফুজুর রহমানকে অন্যত্র বদলি ও পদোন্নতি বাতিল করতে হবে। তা না হলে কর্মবিরতি সহ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করে যাবেন আন্দোলনকারীরা।
সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম মন্ডল।এ সময় তিনি বলেন,ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বর্তমান নতুন অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানকে না সরালে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয়।এর পরও যদি দাবি না মানা হয় তাহলে রোববার (১০ নভেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন পালন করার ঘোষনা।
তিনি আরও বলেন,স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর কোনো চিকিৎসকের ঠাঁই রমেকে হবে না।নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তিনি উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।অথচ ছাত্র আন্দোলনে তিনি সরাসরি ছাত্রদের দমনে নিয়োজিত ছিলেন।এমন একজনকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়াটা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করার সামিল।
এর আগে গত বুধবার (৩০অক্টোবর) থেকে নতুন অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে রমেকের চিকিৎসক- শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে তারা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই সময়ের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমান। এ ছাড়াও পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট বদলানোর জন্য প্রতিবেদন প্র¯স্ততকারী চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন তিনি ও সেই সময়ের অধ্যক্ষ। এ ছাড়াও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতৃত্ব দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ,ডা.মাহফুজার রহমান উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন তার কক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত সারাক্ষণই তার কক্ষে বসে থাকতো।এ নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আপত্তি তুললেও সেসব কথা কানে তোলেননি তিনি।এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে টানা ৫ বছর উপাধ্যক্ষ ও ৪ বছর মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ডা. মো. মাহফুজার রহমান। এ সময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও আওযামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
অন্যদিকে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সই করা চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।একই কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে।পরের দিন বুধবার নতুন অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক,কর্মচারী ও ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মন্তব্য ( ০)