• স্বাস্থ্য

রোগীর সেবায় ভিন্ন উদ্যোগ, কালীগঞ্জে বদলে গেছে স্বাস্থ্য সেবা

  • স্বাস্থ্য
  • ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৭:৩৫:৫১

ছবিঃ সিএনআই

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারে বদলে গেছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনজুর-এ-এলাহীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় অতীতের যে কোন সময়ের চেয়েও রোগীরা এখন আন্তরিকতার সাথে পূর্ণ সেবা পাচ্ছেন। বিগত দিনের চেয়ে বেড়েছে সেবার মান ও সরকারী রাজস্ব। জানা গেছে, প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কমপ্লেক্সটির পুরো চত্বরজুড়ে বাহারি ফুল আর সবুজের সমারোহ। নিয়ম শৃঙ্খলার উন্নতি ও সেবার মান ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে হাসপাতালের সেবা নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট  প্রকাশ করেছে।

এ হাসপাতালে বিগত দিনে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট ছিল। বর্তমানে সব সংকট কেটে এখন মডেল হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের নেপথ্য কারিগর কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনজুর-এ-এলাহী। স্বাস্থ্য সেবার আরও উন্নতির জন্য বর্তমানে এখানে রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। স্বাভাবিক প্রসব, সিজারিয়ান অপারেশন, প্রসব-পূর্ব ও পরবর্তী সেবা, সম্প্রতি হাসপাতালটিতে এনসিডি কর্ণার, এএনটি কর্ণার, আইএমসিআই কর্ণার, শিশু ওয়ার্ড ও স্যাম কর্ণার, ডে কেয়ার সেন্টার, সেন্ট্র্রাল অক্সিজেন সিস্টেম, প্যাথলজি বিভাগে উন্নতমানের মেশিন সংযোজন, জরুরী বিভাগকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত, হাসপাতালের গ্যারেজ ও দৃষ্টি নন্দন কনফারেন্স রুম তৈরি করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার সাথের লোকজনের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশ্রামাগার। শুধু তাই নয় হাসাপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল সৃষ্টি করে সেবার মান ব্যাপক উন্নতি করা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এটি নিয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কথা বলেও কোন সুরাহা হয়নি। হাসাপতালে ইসিজি মেশিন থাকলেও ছিল না কার্ডিওগ্রাফার। এখানে ছিলনা কোন আল্ট্রা মেশিন। এমনকি অন্যান্য মেশিনপত্র, প্যাথলজির রে-এজেন্টসহ হাসপাতালের লোকবল। সেই কারণে ডাক্তারদের দেওয়া নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালের বাহিরে অতিরিক্ত খরচে করতে হতো। সরকারী হাসপাতাল হলেও সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাহিরে ছিল স্বাস্থ্য সেবা। যে কারণে সে সময় রোগীর সংখ্যা কমছিল। কিন্তু বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনজুর-এ-এলাহী ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর যোগদানের পর তিনি সকল সমস্যার চেষ্টা করেছেন। তাই আগের চেয়ে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুন। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও এখানে প্বার্শবর্তী পলাশ, কাপাসিয়া ও রূপগঞ্জ উপজেলার রোগীরাও  আসেন স্বাস্থ্য সেবা নিতে। সূত্র জানায়, হাসপাতালে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল পরিচ্ছন্নকর্মী। কারণ তাদের কাজ অনুযায়ী সম্মানী যথাযথ দেওয়া সম্ভব হতো না। এখন সব মিলিয়ে হাসপাতালে ২১ জন পরিচ্ছন্নকর্মী রয়েছে।

আগে তাদের সম্মানী ৩ হাজার হলেও এখন তা ৫ হাজার উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। এক সময় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার কনসালটেন্ট পদ শূণ্য ছিল। ইউএইচএনএফপিও’র হস্থক্ষেপে সেগুলো পূরণ করে স্থানীয় রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় হাসপাতালে খোলামেলা পরিবেশে টিকা প্রদান করা হলেও ডা. মনজুর-এ-এলাহীর হস্থক্ষেপে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় হয়েছে সুবিশাল টিকা প্রদানের সেট। আগে একটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি ছিল অকার্যকর। বর্তমানে দুটি এ্যাম্বুলেন্স রোগীদের সেবা প্রদান করছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে ডাক্তাররা রোগী দেখা ও অপারেশন থিয়েটারের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বিকল্প বিদ্যুৎ (হেভি জেনারেটর) ব্যবস্থা। সূত্র আরো জানায়, গত তিন বছরে আউট ডোর পেসেন্ট (ওপিডি) বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০২১ সালে ওপিডি ছিল ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৩২ জন, ২০২২ সালে ওপিডি ছিল ছিল ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ১৭৯ জন ও ২০২৩ সালে ওপিডি ছিল ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭৩৭ জন। একই সময় বেড়েছে হাসাপতালের জরুরী সার্ভিস, ভর্তি ও ভায়া রোগীর সংখ্যা। বেড়েছে নরমাল ও সিজারিয়ান রোগীর সংখ্যাও।

গত তিন বছরে হাসপাতাল ইউজার ফি আদায় বেড়েছে (সরকারী রাজস্ব)। ২০২১ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরকারী রাজস্ব আদায় হয়েছে ২২ লক্ষ ৫২ হাজার ১০৫ টাকা, ২০২২ সালে ৩০ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫৪১ টাকা ও ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়ে  ৭২ লক্ষ ৮৪ হাজার ১৫৬ টাকায়। ওই বছর প্রতি মাসে গড় আদায় হয়েছে ৬ লক্ষ ৬২ হাজার ১৯৬ টাকা। অন্যদিকে, নিয়মিত করোনাসহ বিভিন্ন টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা এবং বিশেষ টিকা প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। এ সময় হাসপাতালে খোলা পরিবেশে টিকা প্রদান করা হলেও ডা. মনজুর-এ-এলাহী হস্থক্ষেপে হয়েছে সুবিশাল টিকা প্রদানের সেট। প্রয়োজনীয় জনবল সংকট থাকা সত্বেও এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সমন্বয় করে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নানা সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ, আন্তঃবিভাগ এবং বহির্বিভাগের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম এবং সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্যখাতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অর্জন এবং এক অনন্য সুন্দর সফলতা বলে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে দিয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

তিনি এখানে যোগদানের পর থেকে হাসপাতালে রোগীদের খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফুল-ফলাদির বাগান,অফিস স্টাফ ও রোগী এবং স্বজনদের অবসর সময় কাটানোর দর্শনীয় স্থান সৃজনের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়নসহ নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়া রাত অবধি এই কর্মকর্তাকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কিভাবে আরও সহজে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায় এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনজুর-এ-এলাহী স্যার। এখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের কর্মকর্তার সৃজনশীল ভাবনা এবং উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সৈয়দ মো. শহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে মেশিন অচল অবস্থায় ছিল। এখন সেটি চালু করা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। অপুষ্টিহীন শিশুদের জন্য আলাদা কেবিন, রোগীদের খাবার-দাবারের জন্য সু-ব্যবস্থা, শিশুদের দুগ্ধ স্থাপানের জন্য কেবিন, রোগীদের সিরিয়াল অনুযায়ী টিকিট ও চিকিৎসার জন্য সারিবদ্ধ লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিশোর-কিশোরীদের জন্য রয়েছে এডোলেসেস সেন্টার আরএমও আরো জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ এবং সকলের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা. মনজুর-এ-এলাহী স্যার অপরিসীম ভূমিকা পালন করছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পারিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএনএফপিও) ডা. মনজুর-এ-এলাহী বলেন, আমি এ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই আমার টিম নিয়ে আমি হাসপাতালটিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করি। প্রথমে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ তৈরি, অচল ও অর্ধসচল যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করা ও মানসম্মত চিকিৎস। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo