নিউজ ডেস্কঃ রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি সংলগ্ন সড়ক এবং এর আশপাশের এলাকা দখলে নিয়ে রেখেছে ছাত্র-জনতা।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সপ্তাহব্যাপী ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন বুধবার (১৪ আগস্ট) রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সড়ক দখলে নেয়। বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা পর্যন্তও বহু শিক্ষার্থী ও জনতাকে ওই এলাকা দখলে রাখতে দেখা গেছে। তাদের অবস্থানের কারণে বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল করে। পরে ২০০৮ সালে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উচ্চ আদালতের আদেশে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের পাশাপাশি ঘোষণা হয় সরকারি ছুটিও। পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে দিনটিতে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িটিতে হামলা করা হয়, যেটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে গড়ে তুলেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। লুটপাট আর আগুনের কারণে বাড়িটির দেয়াল ছাড়া আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভেঙে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তৈরি করা বেদী ও তার স্মৃতিস্তম্ভ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকেই ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়।
সেদিনই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালন করার আহ্বান জানান। ভারতে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগ সভাপতির ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক পেজে এই বিবৃতি পোস্ট করা হয়। ১৫ আগস্টের এই ঘোষিত জমায়েত নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১৪ আগস্ট থেকে চার দিনের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ পালনের ঘোষণা দিয়ে রাজপথে মিছিল করছে।কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশের যেসব স্থানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন গতকাল বুধবার সেসব পয়েন্ট অভিমুখে ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কর্মসূচি পালনের পর সন্ধ্যা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ধানমণ্ডি এলাকায় জড়ো হন তারা। রাতভর ছিলেন সড়কেই। সকালে শুক্রাবাদ মোড় থেকে ধানমণ্ডি ৩২ এবং মেট্রো শপিংমলের সামনে অবস্থান নিয়েছেন তারা। কেউ কেউ অবস্থান নিয়েছেন ধানমন্ডি লেক এলাকায়৷
আবার শিক্ষার্থীরা হঠাৎ হঠাৎ মিছিল বের করছেন, যা আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করছিল৷ এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে দেখা গেছে লাঠি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। এছাড়া পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্য মেট্রো শপিংমল মোড়ে অবস্থানরত থাকতে দেখা যায়। এদিকে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আওয়ামী লীগের কোনো নেতৃবৃন্দকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দেখা যায়নি। যদিও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সকালে ধানমন্ডি আসার কথা ছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গতকাল রাতেও শোরগোল ছিল- হাজার হাজার আওয়ামী নেতাকর্মীদের ঢল নামবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে৷ তবে সে চিত্র দেখা যায়নি। যদিও আওয়ামী সমর্থিত দুই-একজন নেতাকর্মী কালো পোশাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের দিকে আসার চেষ্টা করেন। কালো পোশাক দেখেই, তাদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেন শিক্ষার্থীরা৷ এছাড়া আওয়ামী লীগ সন্দেহ হলেই তাদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করছেন অবস্থানরতরা।
মন্তব্য ( ০)