• সমগ্র বাংলা

নাফনদী সীমান্তের মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ ও স্থলে টানা গোলাগুলি

  • সমগ্র বাংলা
  • ১৩ জুন, ২০২৪ ১৪:০২:৫৪

ছবিঃ সিএনআই

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ টেকনাফের নাফনদীর সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের নিকটে টানা ২ দিন ধরে দেখা মিলছে বড় ধরণের এটি জাহাজ। আর সেই জাহাজ ও মিয়ানমারের স্থলে ভাগে বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত চলছে গোলাগুলি। এ সময় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এতে সীমন্ত পাড়ের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতংক। 

সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সরওয়ার কামাল, নাজির পাড়ার দিদার আলম জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর থেকে নাফনদীর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার বিপরীতে মিয়ানমারের নিকটবর্তী দেখা মিলে একটি বড় আকারের জাহাজ। যে জাহাজটি মিয়ানমারের নৌ-বাহিনীর বলে দাবি করছেন সীমান্তের লোকজন। জাহাজটা দুপুর থেকে টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত ওখানে দেখা গেছে। এরপর বুধবার রাত ৯ টা থেকে এপারে ভেসে আসতে থাকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। যে শব্দ টানা ৩ ঘন্টার ধরে বিকট আকারে সীমান্তের লোকজন শোনেছেন। এরপর থেমে থেমে শব্দ শোনা গেছে রাতভর। বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত আবারও শোনা গেছে এই বিকট শব্দ। 

বৃহস্পতিবার সকালের পর সেই বড় জাহাজটি দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে টেকনাফের নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে। আর সেই জাহাজ থেকে মিয়ানমারের স্থলভাগে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বর্ষণের শব্দ অব্যাহত রয়েছে।

সাবরাং ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তার সাথে আরাকান আর্মি চলমান যুদ্ধের জের ধরে গত ১ মাস টেকনাফ সীমান্তের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। শোনা যায়নি বিস্ফোরণের শব্দ। এর মধ্যে গত ৫ জুন, ৮ জুন এবং ১১ জুন নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের অংশ থেকে সেন্টমার্টিনগামি নৌ যানে গুলি বর্ষণ হয়। বুধবার দুপুরে নাফনদীতে দেখা মিলে মিয়ানমারের নৌ-বাহিনীর জাহাজ। এরপর রাত থেকে আবারও শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ।

তিনি জানান, বুধবার রাত থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার হতে থেমে থেমে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। এতে সীমান্ত লাগোয়া শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট এলাকাসহ জালিয়াপাড়া, পশ্চিম পাড়া, উত্তর পাড়া ও আচারবনিয়ার আশপাশের বসত ঘর ও স্থাপনা কেঁপে উঠে। সীমান্তের একেবারে কাছাকাছিতে বসবাসকারিদের অনেকে বাড়ী-ঘর ছেড়ে কিছুটা দূরবর্তী স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসার ঘটনা অব্যাহত থাকায় স্থানীয়দের অনেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। জাহাজটি এখন নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে রয়েছে। দুপুর একটা পর্যন্ত গোলাগুলি ও বিস্ফোরণ অব্যাহত আছে।

আব্দুস সালাম জানান, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাঙ্গালা, নলবইন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকা। ধারণা করা হচ্ছে, মংডু শহর ও আশাপাশের এলাকাগুলোতে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্টি আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। এতে উভয়পক্ষ ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।

টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী বলেন, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জেনেছেন। জাহাজটিও মিয়ানমারের অংশে। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টরা সজাগ রয়েছে। তারপরও সীমান্ত পরিস্থিতির উপর প্রশাসন পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, একটি বড় জাহাজ দেখা এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার বিষয়টি অবহিত রয়েছি। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় সর্তক অবস্থানে রয়েছি আমরা। 

এদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট থেকে গুলিবর্ষণের গত ৭ দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌ যান চালাচল বন্ধ থাকার পর বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে পন্য নয়া এবং সীমিত আকার যাত্রী আসা যাওয়া শুরু হেওয়ার কথা বৃহস্পতিবার থেকে। তবে এখন পর্যন্ত তা শুরু হয়নি। 

গোলাগুলির কারণে পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo