অনলাইন ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে। ১৫ সদস্যের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪টি। ভোট দেওয়া থেকে শুধু বিরত ছিল রাশিয়া।
যুদ্ধবিরতি কেমন হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য ইসরাইলে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি ইসরাইলের বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে জানা যায়।
ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে আট মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতেই তার এই সফর।
ব্লিঙ্কেন এমন এক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন, যখন ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে ‘অচলাবস্থা’ চলছে। গাজা যুদ্ধের অবসান এবং ইসরাইলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির আলোচনা ইতিমধ্যে জটিল অবস্থায় রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করা নিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তার দুই মন্ত্রী। এমন পরিস্থিতে চাপে আছেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভা থেকে বেনি গ্যান্টজের পদত্যাগের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। গত রোববার তিনি রাজনৈতিক মিত্র গাদি আইসেনকৎকে সঙ্গে নিয়ে পদত্যাগ করেন। তারা দুজনই অবসরপ্রাপ্ত সেনা জেনারেল। তারা চিফস অব স্টাফ হিসেবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গ্যান্টজের মাধ্যমে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার সঙ্গে যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত যুক্তরাষ্ট্র। এখন গ্যান্টজ বিরোধী দলে ফিরে গিয়ে আগাম নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন। জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো ইসরাইলের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে এগিয়ে রাখছে।
ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে একটি মার্কিন খসড়া দেওয়া হয়েছে, যার অধীনে ইসরাইল গাজার ক্যাম্পগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলার সময় জিম্মিদের মুক্ত করে দেবে।
ব্লিঙ্কেন মঙ্গলবার তেল আবিবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার থেকে পদত্যাগ করা সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গ্যান্টজ এবং বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিডের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এখন দুই কট্টর জাতীয়বাদী নেতার সমর্থন ধরে রাখার ওপর নেতানিয়াহুকে নির্ভর করতে হচ্ছে। তারা হলেন জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ।
তবে ইতামার ও বেজালেল হুমকি দিয়েছেন, হামাসকে নির্মূল না করে নেতানিয়াহু যদি কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন, তবে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হবে।
ইতামার ও বেজালেল—দুজনই কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদী। তারা চান, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলুক। তারা মনে করেন, ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী সব এলাকার মতো গাজাও একটি ইহুদি ভূখণ্ড। আর এটি ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। তাই ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় গাজা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা উচিত।
আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তিনটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছিল। কিন্তু এখন বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য উন্মুখ।
গত ৩১ মে বাইডেন একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণের জন্য হামাসের প্রতি আহ্বান জানান।
বাইডেন ও তার উপদেষ্টারা জানেন, সামনে সংকট আছে। হামাস জোর দিয়ে বলছে, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারসহ যুদ্ধ অবসানের নিশ্চয়তার চুক্তিতেই কেবল তারা সম্মত হবে।
এক বক্তব্যে বাইডেন বলেন, যেকোনো ধরনের চাপ উপেক্ষা করে প্রস্তাব সমর্থনের জন্য তিনি ইসরাইলের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
ইতামার ও বেজালেল অবশ্য চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করেননি। নেতানিয়াহু সরকারের এই দুই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বাইডেনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। চুক্তিতে রাজি হলে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ শুনলে নেতানিয়াহুর জোট সরকার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। নতুন নির্বাচনে তার পরাজয় ঘটলে তাকে হয়তো তদন্ত কমিশনের মুখোমুখি হতে হবে। ৭ অক্টোবরের ঘটনায় তার রাজনৈতিক, গোয়েন্দা ও সামরিক ব্যর্থতা আছে কি না, সে বিষয়ে তখন তাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।
মন্তব্য ( ০)