আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে ঘোষণা দিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যদি ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে- তাহলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।
নরওয়ে বলছে, আইসিসির ওয়ারেন্ট জারি হলে নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করতে তারা ‘বাধ্য’। প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে মঙ্গলবার নরওয়ে এই ঘোষণা দিলো।
তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলু বুধবার (২২ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিচারকদের প্যানেল পরোয়ানা জারি করলে নরওয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে গ্রেফতার করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডে বলেছেন, হেগ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে এবং তারা নরওয়েতে আসলে তাদের গ্রেফতার করতে বাধ্য থাকবে তার দেশ।
নরওয়ের একটি অনলাইন পোর্টালে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নেতানিয়াহু নরওয়ে সফরে আসলে তাকে গ্রেফতার করে প্রত্যর্পণ বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সমর্পন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডে।
বার্থ এইডে আরো বলেন, কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে নরওয়ের বাধ্যবাধকতা অনুসারে তাকে আদালতের কাছে হস্তান্তর করে থাকে।
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানার মুখে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ইতোমধ্যেই আইসিসিতে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারির আবেদন করা হয়েছে।
মূলত গাজায় যুদ্ধাপরাধের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জমা পড়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)।
আইসিসির শীর্ষ প্রসিকিউটর করিম আসাদ আহমেদ খানের (করিম খান) দপ্তর থেকে করা হয়েছে এই আবেদন। করিম খান গত সোমবার জানান, তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন।
এছাড়া হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং হামাসের অন্য দুই নেতার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেছেন তিনি।
এখন হামাস ও ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয় বিবেচনা করবেন আইসিসির বিচারপতিদের একটি প্যানেল। মূলত করিম খানের অফিসের উপস্থাপিত প্রমাণগুলো মূল্যায়ন করবেন তারা। পরোয়ানা জারি হলে আদালতের রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো সুযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করতে বাধ্য থাকবে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা থাকায় ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে থাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এছাড়া ফিলিস্তিনও রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী একটি পক্ষ। এই সংবিধির ভিত্তিতেই আইসিসি গঠিত হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
মন্তব্য ( ০)