• অপরাধ ও দুর্নীতি

নেশাগ্রস্ত সজনে চোরদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার আমিনুর

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ২১ মার্চ, ২০২৪ ১৬:০১:১০

ছবিঃ সিএনআই

খুলনা প্রতিনিধিঃ খুলনার বটিয়াঘাটায় নেশাগ্রস্ত সজনে চোরদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন শ্রমজীবী মো: আমিনুর শেখ (৪৪)। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মো: সাঈদুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। পুলিশ সুপার দপ্তরে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনি জানান, গত ১৯ মার্চ বেলা ১২ টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে বটিয়াঘাটা থানাধীন সুরখালী ইউনিয়নের গাওঘবা গ্রামে একটি মৃতদেহ (অজ্ঞাতনামা লাশ) পড়ে আছে মর্মে পুলিশ সংবাদ পায়। এই সংবাদে বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বটিয়াঘাটা থানাধীন গাওঘরা গ্রামস্থ জনৈকা কৃষ্ণা প্রামাণিক (৫০) এর বাগান ভিটার উত্তর পশ্চিম কোনে ঝোপ ঝাড়ে একটি অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহটি বটিয়াঘাটার গাওঘরা গ্রামের মোঃ মালেক শেখের ছেলে মোঃ আমিনুর শেখ (৪৪) এর বলে শনাক্ত করতঃ সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এই সংক্রান্তে বটিয়াঘাটা থানার মামলা নং-১০, তারিখ- ২০/০৩/২০২৪খ্রিঃ রুজু হয়।

তিনি জানান, এই হত্যাকান্ডটি ব্রুকুলেস হওয়ায় জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে আমার সার্বিক দিক নিদের্শনা এবং তদারকির মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। বটিয়াঘাটা
থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার চৌকস টিম্ন দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। তদন্তে প্রকাশ পায় যে, মৃত ব্যক্তি মোঃ আমিনুর শেখ (৪৪), যে কৃষি কাজ ও মৎস্য ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং তার মৎস্য ঘেরের সাথে একটি সজনে বাগান রয়েছে। উল্লেখিত মৃত ব্যক্তি গত ১৫ মার্চ রাতের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ সংক্রান্তে বটিয়াঘাটা থানায় একটি নিখোঁজ
ডায়েরি যার নং-৮৪০, তারিখ-১৭/০৩/২০২৪খ্রিঃ করা হয়েছিল। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস টিম গত ১৭ মার্চ ভদ্রা নদীর পাড়ে ঘেরের বেড়ার ভিতরে গোজা একটা রক্ত মাখা শার্ট উদ্ধার করে। এই রক্ত মাখা শার্ট এর সূত্র ধরেই পুলিশ অভিযান শুরু করে।

ফলশ্রুতিতে মামলা রুজু হওয়ার পরে ২০ মার্চ ভোর রাতের দিকে সন্দিগ্ধ বটিয়াঘাটা উপজেলার গাওঘরা গ্রামের মৃত লিয়াকত শেখের ছেরে ফরিদুল্লাহ শেখ (২০) কে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে রক্ত মাখা শার্টটি তার বলে জানায় এবং ঘটনা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে যে, ঘটনার দিন ১৫ মার্চ সন্ধ্যা রাতে অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদ, শাহিন, নয়ন ও ফারুক শাহিনদের বাড়ীর পিছনে কঁচুবাগানে বসে গাজা খায়। এরপরে ফরিদ, শাহিন এবং নয়ন মিলে আমিনুর এর ঘেরে চুরি করে সজনে পাড়তে যায়। ফরিদ সজনে পাড়তে গাছে উঠে। তখন শাহিন এবং নয়ন গাছের নিচে অবস্থান করে।

তারা দু’জনে সজনে কুড়ায়ে সাদা প্লাষ্টিকের বস্তায় ভরতে থাকে। হঠাৎ আমিনুর টর্চ লাইট মারে এবং তাদের দেখে ফেলে। তখন আমিনুর তাদের ধাওয়া দেয় তারা সজনে ফেলে সেখান থেকে দৌঁড়ে চলে যায়। অনুমান ১(এক) থেকে দেড় ঘন্টা পরে তারা ৩ জনে ওৎপেতে থাকে যে, কখন আমিনুর আবার ঘেরে আসবে। ওকে আজ একটা শিক্ষা দিবে। কিছুক্ষণ পর আমিনুর ঘেরের কুড়ে ঘরে ঢুকতে গেলে প্রথমে নয়ন পিছন থেকে মাফলার দিয়ে নাকে মুখে প্যাচ দিয়ে বেঁধে ফেলে। ফরিদ এবং শাহিন হাত-পা ধরে ভদ্রা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। শাহিনের সাথে থাকা লোহার পাইপ নিয়ে ফরিদ প্রথমে মুখের চোয়ালে একটা বাড়ি দেয়। সেই বাড়ি মারার কারণে রক্ত ছিটে ফরিদের শার্টে লাগে। তখন শাহিন ফরিদকে বলে, তোর কুতুর কুতুর বাড়ির কাজ না, ঐডা (লোহার পাইপ) আমার কাছে দে। এরপর শাহিন লোহার রড দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গা মারে আর নয়ন আমিনুরের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুষি মারে।

মারের একপর্যায়ে আমিনুর উকসি কাটে এবং তারা বুজতে পারে আমিনুর মারা গেছে। তখন ফরিদ ভয়ে তার রক্ত মাখা শার্টটি ঘেরের পাশে বেড়ায় ফেলে দেয়। এরপর ফারুক আসে। তখন শাহিন ফারুককে বলে যে, কাকা মারা গেছে। তখন ফরিদসহ নয়ন, ফারুক এবং শাহিন আমিনুরের মৃতদেহকে তুলে জনৈকা কৃষ্ণা প্রামাণিক (৫০) এর বাগান ভিটার ঝোপ ঝাড়ের ভিতর নিয়ে যায়। শাহিন একটি কালো জাতীয় কেমিক্যাল নিয়ে এসেছিলো যা ফারুকের লুঙ্গিতে করে জড়িয়ে মৃত আমিনুরের সারা গায়ে মেখে দেয়। ফারুক মৃত আমিনুরের পায়ের কাছে তার লুঙ্গি ফেলে রেখে যার যার বাসায় চলে যায়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত ফরিদকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করলে সে স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এর উপর ভিত্তি করে বটিয়াঘাটা থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তি ও সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ঘটনায় সম্পৃক্ত শাহিন, নয়ন এবং ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহিনের হেফাজত থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত লোহার (এসএস) পাইপ জব্দ করা হয়। নয়ন এর হেফাজত থেকে মাফলার জব্দ করা হয়। অন্যান্য আলামত তথা যে বস্তায় সজনে ভরা হয়েছিলো সেই বস্তা, ফরিদের শার্ট যে শার্টে আমিনুরের রক্ত লেগেছিল সকল আলামত জব্দ করা হয়। মৃতদেহের কাছ থেকে লুঙ্গি যা ফারুকের বলে শনাক্তকৃত জব্দ করা হয়। মামলা রুজুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত মোট ৫ জন আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo