গাজীপুর প্রতিনিধিঃ শিল্প অধ্যূষিত গাজীপুরে হঠাৎ করেই দেখা দিয়েছে গ্যাসের তীব্র সংকট। এতে করে ডাইং ওয়াশ ও কাপড় উৎপাদনে সক্ষতা কমেছে। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য তৈরিতে সরবরাহ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
গ্যাস সংকটের কারণে গাজীপুর জেলা ও মহানগরের হাজারো শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমেছে৷ এলপিজি, ডিজেল ও সিএনজি গ্যাসে চালু রাখতে হয়েছে এসব কারখানা। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে বহুগুণ। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিল্পকারখানা মালিকরা। অনেক কারখানায় কমেছে শ্রমিকদেরও কাজ। ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে সেটি ওঠানামা করছে দুই এর মধ্যে। গাজীপুরের প্রতিদিন ৬শত মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। অথচ গত ২৪ ঘণ্টায় সরবরাহ হয়েছে মাত্র ৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট।
বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক এলাকায়ও গ্যাসের চাপ কমেছে। এছাড়াও সিএনজি পাম্পগুলোতে চাপ কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। তারা বলছেন তিতাস গ্যাস থেকে আমাদের ১২ পিএসআই নেওয়া কিন্তু আমরা পাচ্ছি দেড় থেকে দুই পিএসআই। ফলে পাম্পগুলোতে নেই গাড়ির চাপ৷ এতে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
কাজলী সিএনজি স্টেশনের মালিক খোকন বলেন, গ্যাসের চাপ অনেক কম। লাইনে চাপ নেই বললেই চলে। কয়েক মাস ধরেই সমস্যা তবে কয়েকদিন আরও বেড়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চাপ থাকে দেড় থেকে দুই পিএসআই। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে অনেক।
গাজীপুরের কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, জেলা ও মহানগরে আড়াই হাজারের কাছাকাছি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাস্তবে এর সংখ্যা আরো বেশি। গ্যাস সংকটের কারণে বেশির ভাগ শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ সংকট দিন দিন আরো তীব্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্পকারখানার মালিকরা। ডাইং ও শিল্প—কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময় মতো শিপমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন বিদেশি বায়াররা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে কারখানার কার্যক্রমে ধস নামবে বলে আশঙ্কা করছেন মালিকপক্ষ। তারা বলছেন গ্যাস সংকটের কারণে পার্টিকে চাহিদা মতো মাল দিতে না পারায় ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।
গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকার এবি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বদরুল হাসান তাসলিম জানান, মাস ঘুরতেই শ্রমিকের বেতন-ভাতা গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ গ্যাস সংকটে বিকল্প হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত খরচে সিএনজি ও ডিজেলের মাধ্যমে ব্রয়লার এবং জেনারেটর চালু করা হয়েছে। গত এক দেড় মাস ধরেই গ্যাস সমস্যায় ফ্যাক্টরি চলেছে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে। যেখানে ব্রয়লার চালাতে প্রয়োজন ১৯ হাজার ৯৬০ ঘন ফুট এবং জেনারেটর চালাতে লাগে ৯০০০ ঘনফুট গ্যাস সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১ থেকে দেড় বা দুই পিএসআই। আবার অনেক সময় জিরোতে নেমে আসে।
তুসুকা গ্রুপের ডাইরেক্টর তারেক হাসান বলেন, কারখানায় গ্যাসের চাপ অনেক বেশি কম। শিপমেন্টের কারণে উৎপাদন কম এটি বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা ডিজেলে উৎপাদন কর্যক্রম অব্যহত রেখেছি। তবে এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
সাদমা ফয়াশন লিমিটেড কারখানার ডাইরেক্টর সোহেল রানা বলেন, গ্যাস নির্ভর আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান। মাস শেষ না হতেই তিতাশ কর্তৃপক্ষ বিলের জন্য চাপ দেয় কিন্তু আমরা তার তুলনায় গ্যাস পাচ্ছি না৷ ফলে আমাদের শিল্প কারখানা টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এভাবে চললে আমাদের উৎপাদন ও রপ্তানি কিভাবে ঠিক রাখবো সেটা নিয়ে সন্ধিহান। আমরা সরকার ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা চাচ্ছি পাশাপাশি এটির দ্রুত সমাধান আশা করছি। আমাদের প্রতিদিন মিনিমাম ৩-৪ পিএসআই চাপ দরকার কিন্তু আমরা পাচ্ছি দেড় থেকে দুই। আমাদের ১৫ পিএসআই নেওয়া, সেখানে গ্যাসের চাপ যেখানে কমপক্ষে ১০ পিএসআই থাকতে হবে, সেখানে থাকছে ১-২ পিএসআই।
তিতাস গ্যাস ও ট্রান্সমিশনের গাজীপুর শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহজাদা ফরাজী বলেন, আমাদের গাজীপুর অঞ্চলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। শীত মৌসুমে লো-এর কারণে ঘাটতি দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বল্পচাপের অভিযোগ পাচ্ছি। আগে থেকেও একটু সমস্যা ছিলো, এখন কারখানায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই স্বপ্লতা বেড়েছে। আমাদের কাছে প্রতিদিনই বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালিকদের অভিযোগ আসছে কিন্তু তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারছি না। রোববার গাজীপুরে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট তার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট।
মন্তব্য ( ০)