• বিশেষ প্রতিবেদন

কুড়িগ্রামে ব্রিজের উপরে বসবাস গৃহহীন পরিবারের

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১২ জুলাই, ২০২৩ ১৭:৪৩:৫২

ছবিঃ সিএনআই

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে একটি নব নির্মিত ব্রিজের উপর ভেঙে আনা ঘরবাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে গৃহহীন দিনমজুর একটি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অসহায় এই পরিবারটি ভূমি ও গৃহহীন দিনমজুর দম্পতি গোলাম মোস্তফা ও সুুফিয়া বেগমের। 

নিজেদের জমি নেই। অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি সেখান থেকেও উচ্ছেদ হয়েছেন। সরকারি ঘরও মেলে নি। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে এই ভরা বর্ষায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নির্মাণাধীন চিলমারী-হরিপুর মহাসড়কের মধ্য জোড়গাছ এলাকায় একটি নব নির্মিত ব্রিজের উপর। অতি কষ্টে সেখানেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। জানেন না কখন ছেড়ে দিতে হবে ব্রিজটিও। তখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন এই চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে যেন দিনমজুর মোস্তফাকে। 

চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মৌজাথানা বড়কুষ্টারী এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা। পেশায় দিনমজুর। হাতে কাজ থাকলে খাবার জোটে। ফলে সংসারে লেগেই থাকে অভাব অনটন। নানা কষ্টে দিনাতিপাত করলেও অর্থাভাবে গড়তে পারেন নি নিজস্ব থাকার একটু ঠাঁই। পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছিলেন বিপাকে। যদিও সেই সময় অন্যের দেওয়া এক টুকরো জমিতে দীর্ঘদিন থেকে অস্থায়ীভাবে গড়েছিলেন সংসার। সেটিও দিন কয়েক পূর্বে ছেড়ে দিতে হয়েছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে আবারও রাস্তায় দাঁড়ান। কোন উপায় না পেয়ে থানাহাট জোড়গাছ সড়ক মধ্যবর্তী (চিলমারী-হরিপুর মহাসড়কের) একটি নব নির্মিত ব্রিজের উপর স্ত্রী, সন্তান, নাতি, নাতনি নিয়ে চালা করে করছেন মানবেতর জীবন যাপন। কষ্টে দিনাতিপাত করলেও এখন পর্যন্ত ভূমি ও গৃহহীন এই  হতদরিদ্র দম্পতি’র ভাগ্যে জোটেনি কোনো সরকারি ঘর। এগিয়ে আসেনি কেউ। চলমান বৃষ্টিপাত তাদের এই ভাসমান জীবনের বিড়ম্বনা যেন আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অসহনীয় এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সরকারের কাছে জায়গা ও ঘরের দাবী জানিয়েছেন এই দম্পতি। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে বিয়ে করে স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকেন। এক মেয়ে স্বামীর সংসারে থাকলেও আর এক মেয়ে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। বাস্তুহারা হওয়ায় ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি এখন থাকা-খাওয়া কিভাবে করবেন তা ভাবতে পারছেন না। 

চাপা কষ্ট নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে গোলাম মোস্তফার বলেন, ‘কয়বছর ধরি মানষের জমিত ঘর করি আছনু। কয়দিন আগে সেটে থাকি থাকি তুলি দিছে মালিক। কোন উপায় না পায়া ব্রিজের উপরা কোনো রকম চালা দিয়া আশ্রয় নিছি। কিন্তু এই ঝড়ির দিনোত খ্যাতা বালিশ সউগ ভিজি যায়রে ভাই, কেমন করি থাকি? সরকার এখনা জায়গা আর ঘর দিলে হামার নিস্তার হয়।’  

মোস্তফার স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘অভাবের সংসারোত খুব টানা-টানির মাঝোত আছি। ইয়ার মধ্যে জায়গা জমি নাই। রোইদে ভাজে আর ঝরি ভিজিয়া দেয় এই হইল হামার জীবন। স্বামী সউগ সময় কাজও পায় না। খুব কষ্টে জীবন চলবার লাগছি।’ 

থানাহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক মিলন বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। ওই দিনমজুরকে অন্য এলাকায় সরকারি ঘর দিতে চাইলেও তারা ওই গ্রাম ছেড়ে যেতে রাজি হননি। তারা চাইলে পরবর্তী বরাদ্দে তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা যাবে।’ 

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে ঘর বরাদ্দ নেই। তবে ওই পরিবারটি যদি চান তাহলে অন্যান্য নিকটবর্তী চর এলাকায় থাকার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। খোঁজ নেয়া হচ্ছে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে উপজেলা প্রশাসন।’

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo