• বিশেষ প্রতিবেদন

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত ইসমাইলের

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১৩ মে, ২০২৪ ১২:৪৩:১৯

ছবিঃ সিএনআই

শিবচর প্রতিনিধিঃ মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। স্বপ্ন একটা শব্দ হলেও তার তাৎপর্য ও গভীরতা বিশাল। স্বপ্নের পথে কোনো কিছুই বাধা হতে পারে না কথাটা সত্য হলেও আবার মাঝে মাঝে সে স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। সাহস-শক্তি থাকলেও সামর্থ্যের কারণে অনেক সময় স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। এমনই এক স্বপ্ন অধরা হওয়া অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীর নাম ইসমাইল হোসেন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি-২০২৪ এ জিপিএ-৫ পেয়ে ভালো ফল করায় খুশি হয়েছেন পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে ইসমাইল হোসেনের।

আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার খরচের চিন্তায় একমাত্র অভিভাবক বাবা ও মা তাদের চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ। জিপিএ-৫ পেয়েও পরিবারের আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ইসমাইল হোসেনের। শিবচর উপজেলার নুরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস. ই. এস. ডি. পি. মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মেধাবী ছাত্র ইসমাইলের বাবা বজলু আকন তিনি পেশায় একজন ভ্যান চালক। আগ্রাসী পদ্মার তীব্র ভাঙনে ভিটে মাটি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জমিতে। চাষাবাদ করার  মতো কোন জমি না থাকা ভ্যান চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালান। অভাবের এ সংসারে শিক্ষক ও আত্মীয়দের সহযোগীতায় কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে ইসমাইল।

উপজেলার বন্দোরখোলা ইউনিয়নের  তাহের শিকদার কান্দি (বড় খাস বন্দরখোলা) এলাকার ভূমিহীন দিনমজুর ও তিন সন্তানের বাবা বজলু আকনের ছেলে ইসমাইল। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ইসমাইল সবার ছোট। তার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম এসএসসি-২০২৩ বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজে পড়াশুনা করছে। তিনিও জীবনের সাথে সংগ্রাম ও লাড়াই করে পড়াশুনা করে যাচ্ছে। বড় বোন ফাতেমা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। তার মা আফরোজা বেগম গৃহিণী।

ইসমাইল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, টাকার অভাবে আমি কি কলেজে ভর্তি হতে পারবো না? আমার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? গরিব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। স্কুলের সকল শিক্ষক ও আত্মীয় স্বজনদের আর্থিক সহযোগিতায় আজ আমি জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে সহযোগিতা করার জন্য। এখন দুঃচিন্তায় ভুগছি ভ্যান চালক বাবা কিভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করবেন। টাকা পাবো কোথায়? ভর্তি হওয়ার জন্য অর্থের যোগান কোথা থেকে আসবে কীভাবে আসবে, এ চিন্তা সারাক্ষণ ভাবিয়ে তুলছে।

তিনি আরো বলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা মাননীয় চীফ হুইপ এমপি মহোদয়ের অনুদান না পেলে কিংবা কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না আসলে  আমার উচ্চ শিক্ষা লাভের ইচ্ছা একবারেই চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।

ইসমাইল হোসেনের মা আফরোজা জানান, নদী ভাঙ্গন, অভাব-অনাটনের মধ্যেও ছেলে ভালো ফলাফল করেছে। সে আরও পড়তে চায়। ৫ জনের সংসারে আমার স্বামী ভ্যান চালিয়ে উপার্জন দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু ছেলের কলেজে পড়ালেখার খরচ কোথায় পাব। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। কষ্ট করে বড় মেয়ে এইচএসসি পাশ করছে । এরপর বড় ছেলে কষ্ট করে কলেজে পড়াশুনা করতেছে। আমাদের কোন সম্পতি নেই। যেইটুকু ছিল তা আগ্রাসী পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের তো বাড়ির ভিটাও নেই। আমার চাচার জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। আমার ছেলে ইসমাইলের পড়াশোনা জন্য এমপি মহোদয়, স্থানীয় প্রশাসন ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করছি। 

সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, ইসমাইল মেধাবী ছাত্র। স্কুলে আমরা তাকে বিনামূল্যে পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছি। গরিব পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পরেছে তার। 

সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ফাহিম আহমেদ বলেন, ইসমাইল সত্যিই একজন মেধাবী ছাত্রী। ইসমাইলসহ তার এক বোন ও ভাই তারাও মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ইসমাইল  তার পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছিলাম। এখন তার লেখাপড়ায় কেউ সহযোগিতা না করলে, হয়তো তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যেতে পারে। গরিব পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। তাই এমন মেধাবীদের লালন করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ইসমাইল সে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভালো রেজাল্ট করায় আমরা গর্বিত। এমপি ও প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানরা নজর দিলে ইসমাইলের ভালো কলেজে পড়াশোনা আটকাবে না, এমনটাই আশাবাদী স্থানীয় এলাকাবাসী।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo